পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কেরাণী

ভিতরে মোটা নরম গদির উপরে পরম আলস্যভরে সুসজ্জিত দেহ এলাইয়া দিয়া এক যুবক বসিয়া আছে। তাহার চক্ষু অর্দ্ধ-নিমীলিত, তাহার ভাবভঙ্গী নির্ব্বিকার, যেন সহরের যত দুঃখ, যত দৈন্য, যত হাহাকারের ভিতরে অটল-মহিমায় বধির শ্রবণে বসিয়া, সে আপনাকে আপনি দেখিতেছে।

 গাড়ীর চাকা হইতে কাদার ধারা উৎক্ষিপ্ত হইয়া প্রিয়নাথের যত্নরক্ষিত সামান্য পরিচ্ছদ সুবিচিত্র করিয়া দিল। সে বিরস বদনে আপন মনে কহিল, “কেন এই বিভেদ? কেন আমি রাস্তায় কুকুরের মত এই জল-কাদায় হাঁটিয়া চলিয়াছি, আর ঐবা কেন আরামে লোকের গায়ে কাদা ছিটাইয়া, সকলকে অবজ্ঞা করিয়া চলিয়াছে? কেন আমি হাড়; ভাঙ্গা খাটুনি খাটিয়াও, বিদ্যায়, রূপে, গুণে শ্রেষ্ঠ হইয়াও অর্থহীন ব্যর্থ জীবনে অর্দ্ধাহারে ছিন্নবেশে দিনের পর দিন গণিতেছি, আর ঐ মূর্খ, কদাকার পশু কেন দিব্য বেশে, বিনা শ্রমে, বিনা চিন্তায় ধূলির মত টাকা উড়াইয়া দিবার অধিকার লাভ করিল? কেন এই প্রভেদ? ভগবান, তুমি কি আছ? যে তোমায়, ভগবান, সমদৃষ্টি বলিয়া প্রচার করে, প্রতারক সে—মূর্খ সে! ‘তুমি’ নাই— তুমি’ নাই!”

 সাম্‌নে আফিস,— প্রকাণ্ড অট্টালিকা, চক্‌চকে দামী পাথরের থাম, বড় বড় জান্‌লা-দরজাগুলি উজ্জ্বল রং করা। বাহির হইতে মাথা তুলিয়া তাহার দিকে হাঁ করিয়া চাহিতে চাহিতে পথিকেরা রাস্তা দিয়া চলিয়া যাইতেছে; ভাবিতেছে, কি চমৎকার বাড়ী! যেন স্বর্গপুরী! হায়, তারা ভুলিয়া গিয়াছে, মাকালের রাঙ্গা রূপের আড়ালে কি মালিন্য!

 প্রিয়নাথ ভিতরে ঢুকিল। কার্পেটমোড়া সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিল। মধ্যে মস্ত একটা হল, বার্নিশকরা কাঠের ছোট ছোট দেওয়ালে তাহা