পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কেরাণী

যদি দেখিতে চাও, সওদাগরী আফিসের কেরাণীদের দেখ। এমন ফটো আর কোথাও পাইবে না। বুকে তুষানল, মুখে হাসির কথা শুনিয়া আশ্চর্য্য হইও না। খাঁচার পাখী কি গান গায় না??

 প্রিয়নাথ আপনার টেবিলের সুমুখে গিরা, চাদরখানা গলা হইতে খুলিয়া আগে চেয়ারের হাতায় বাঁধিল। তারপর একখানা কাগজে লাল কালি দিয়া কয়েক লাইন “শ্রীশ্রীদুর্গা সহায়” লিখিল। এই না সে বলিতেছিল, বিশ্বে ঈশ্বর নাই? হা, মানুষের স্বভাব ত’ এই!

 দুর্গানাম-লেখা কাগজখানি চোখ বুজিয়া বারকয়েক কপালে ছুঁয়াইয়া, সে একেবারে কাজ শুরু কবিয়া দিল।

 প্রিয়নাথ আফিসের কাহারও সঙ্গে সাধ্যমত মিশ্রিত না। সে শিক্ষিত, তাহার সহকর্ম্মীদের মনের সঙ্গে তাহার উচ্চাভিলাষী মন ঠিক খাপ্ খাইত না।

 তিনদিন পরেই পূজা। আফিসে কাজের বড় ভিড়। প্রিয়নাথ যখন চেয়ার ছাড়িয়া উঠিল, ঘড়ীতে তখন সন্ধ্যা আট্‌টা প্রায় বাজে।

 সে তাড়াতাড়ি বড়বাজারের ভিতর দিয়া বাড়ীর দিকে চলিল। রাস্তার জনতায় প্রতিপদেই বাধাপ্রাপ্ত হইয়া তার মন যথেষ্ট ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিতেছিল। লোকগুলার কি অন্যায়! ইচ্ছা করিয়াই আমার পথে আসিয়া দাড়াইতেছে! একটু চট্‌পট্‌ বাড়ীতে গিয়া যে হাত-পা ছড়াইয়া বিশ্রাম করিব, তারও যো নাই। আর এই গরুর গাভী—এগুলা কলিকাতা হইতে দূর শুইলে সব আপদ্ চুকিয়া যায়, এমনি নানা উদ্ভট কথা ভাবিতে ভাবিতে প্রিয়নাথ শেষে বাড়ীতে আসিয়া পৌছিল।