রাত সে প্রলাপ বকিতে লাগিল। “বাবা, আমায় জামা দিলে না? জামা প’রে আমি ঠাকুর দেখ্তে যাব।”
প্রিয়নাথ তার মাথা চাপড়াইতে চাপড়াইতে বলিল, “দেবো বৈকি বাবা! আগে সকাল হোক।”
ভোর হইল। থোকার জ্বর কমিল না, বরং তার উপরে ফিটের লক্ষণ প্রকাশ পাইল।
সুরবালা ভয়ে বিবর্ণ হইয়া বলিল, “ওগো, ডাক্তার ডাকো।”
প্রিয়নাথ বলিল, “হুঁ—ডাক্তার! সুরো, কাল মাস-কাবার, সেটা মনে আছে কি? ডাক্তার ডাকো! পয়সা কোথায়?”
সুরবালা বলিল, “তা বলে ত বিনে চিকিচ্ছায় ছেলেটাকে মেরে ফেল্তে পারি না, কোথাও কেউ ধার্-টার্ দেবে না?”
“দেখি।” প্রিয়নাথ চটিপায়ে দিয়া নীচে নামিয়া গেল।
ধার মিলিল,—বহু কষ্টে। ডাক্তার আসিল, ছেলের নাড়ী টিপিল, বুক দেখিল, নাক মুখ বিকৃত করিয়া কহিল, “ব্যামো শক্ত, দেখি, কতদূর কি কর্ত্তে পারি।”
পরদিন যথাসময়ে প্রিয়নাথ, আফিসে গিয়া হাজিরা-বইয়ে নামসই করিল। তখনও বড়বাবু আসেন নাই। অথচ, প্রত্যেক মিনিট তার কাছে এক যুগ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। শেষে আর সে থাকিতে পারিল না,— তাড়াতাড়ি সাহেবের ঘরে ঢুকিয়া, সাহেবকে সেলাম করিয়া দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কাঁপিতে লাগিল।