পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সাহেব কি লিখিতেছিল, কাগজ হইতে চোখ না তুলিয়াই ঘাড়টি একটু হেঁট করিল মাত্র।

 প্রিয়নাথ বলিল, “স্যর, আমার ছেলের বড় অসুখ, দুদিন ছুটি।”

 সাহেব তেমনিভাবেই বলিল, “বাবুকে বল।”

 ‘বাবু’ মানে বড়বাবু! প্রিয়নাথ আর কোন কথা বলিতে সাহস করিল না, আস্তে আস্তে ফিরিয়া আসিল। দেখিল, বড়বাবু আসিয়াছেন। বড়বাবুর গোঁফ-দাড়ী কামানো,—কিন্তু খুরের সঙ্গে বহুদিনেব দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায়, ছোট ছোট কর্কশ পাকা চুলে মুখের নীচের দিক্‌টা বেজায় বন্ধুর! ঠোঁটের দুপাশ দিয়া পানের পিচের ক্ষুদ্র স্রোত সদা প্রবাহিত। দেহখানি ভয়ানক মোটা, তার উপরে টান্ চাপকান। একটা সচল তাকিয়ার কল্পনা যদি সম্ভব হয়, তাহা হইলে বড়বার চাপকান-চাপা স্থুল দেহের কতক আঁচ, পাইতে পারা যায়। তাঁর আকৃতির আর একটা কথা বলিতে ভুলিয়াছি। সেটি তাঁর মাথা যোড়া অতি চক্‌চকে বার্ণিশকরা টাক্,—দিনের আলো পড়ায় তাহা ইস্পাতের মত উজ্জ্বল দেখাইতে ছিল। টাকের মাঝখানে ঠিক তিনগাছি চুল; কোন রসিক তাহা দেখিয়া বলিয়াছিলেন, ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলো!

 বড়বাবু চেয়ারে বসিয়া অর্দ্ধমুদিত নেত্রে মুখ বিকৃত করিয়া কি ভাবিতেছিল, এমন সময় ছুটির দরখাস্ত হাতে প্রিয়নাথ আসিয়া হাজির হইল।

 কোনরূপ ভূমিকা করিয়া কথা পাড়ে, প্রিয়নাথের মনের অবস্থা তখন তেমন ছিল না। সে বড়বাবুর সুমুখে গিয়া সোজাসুজি বলিল, “মশাই, আমার ছেলে বাঁচে কি না বাঁচে, আমাকে দুদিনের ছুটি দিতে হবে।”

১২