পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

মহা খাপ্পা হইয়া বলিলেন, “দিতেই হবে? আমি তোমার বাবার চাকর? ইউ স্কাউন্‌ড্রেল, আমার ওপর হুকুম— অ্যাঁ?”

 প্রিয়নাথের মাথায় রক্ত চড়িয়া গেল। তাহার মনে দুর্দ্দমনীয় ইচ্ছা হইতে লাগিল, এই হৃদয়হীন পশুটাকে আচ্ছা করিয়া ঘাদুই দিয়া, এই ঘৃণ্য, তুচ্ছ গোলামীকে পায়ে থ্যাৎলাইয়া সেই মুহূর্ত্তেই সে চলিয়া যায়। কিন্তু তখনই মনে পড়িল, ঘরে তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা! ছেলের জ্বর, ঔষধ-পথ্য, ডাক্তার চাই। মেয়ে বড়, আজ বাদে কাল সেটিকে পার করিতে হইবে। ঘরের বাক্স খালি, রাত পোহাইলে পোড়া পেটের ভাবনা ভাবিতে হইবে।

 এক পলকের ভিতরে, প্রিয়নাথের মস্তিষ্কে বিদ্যুতের মত এমনি নানা চিন্তা খেলিয়া গেল এবং তখনই যেন কাহার অপূর্ব্ব সম্মোহিনীতে তাহার সর্ব্বোদ্ধত শির আবার নুইয়া পড়িল, তাহার মুষ্টিবদ্ধ হস্ত আবার শিথিল হইয়া পড়িল। কেরাণীর আবার রাগ! সে বড় ক্ষণিক!

 বড়বাবুর রাসভ-নিন্দিত স্বর, বোধ হয় সাহেবের কাণে গিয়াছিল। কারণ হঠাৎ সাহেব আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইলেন। একবার প্রিয়নাথের দিকে চাহিয়া বড়বাবুকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ব্যাপার কি বাবু?”

 বড়বাবু সব কথা খুলিয়া বলিলেন। অবশ্য, তার উপর কালোপযোগী টীকা-টিপ্পনি করিতে ভুলিলেন না। সাহেব সমস্ত শুনিয়া প্রিয়নাথের দিকে ফিরিয়া বলিল, “তুমি বাবুর উপর হুকুম চালিয়েছ?”

 প্রিয়নাথ নিম্নস্বরে বলিল, “না, স্যর!”

 সাহেব অধীরভাবে ওষ্ঠ দংশন করিয়া বলিল, “তুমি কি বল্‌তে চাও, আমার বাবু মিথ্যাবাদী?”

১৪