পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কেরাণী

 প্রিয়নাথ কহিল, “না স্যর! আমি তা বল্‌তে চাই না, তবে উনি কথাটা একটু বাড়িয়ে বলেছেন।”

 বড়বাবু ভ্রূকুটি করিয়া কহিলেন, “তবে রে ছুঁচো! আমার সাম্‌নে তুই আমারি নামে লাগাস। এত বড় বুকের পাটা তোর! সার! স্যর্! ওকে ডিশ্চার্জ্জ করুন, এখনি ডিশ্চার্জ্জ করুন।”

 সাহেব মুখ টিপিয়া একটু হাসিল। তারপর শিষ্‌ দিতে দিতে দরজার কাছে গিয়া হঠাৎ থামিয়া বলিল, “তোমার ছেলের অসুখ?”

 “হ্যাঁ সার।”

 সাহেব একান্ত সহজ স্বরে বলিল, “আচ্ছা বাবু, আজ তোমার ছুটি। কিন্তু কাল ‘মেল-ডে’, তুমি অবশ্য আস্‌বে। আমি তোমার পুত্রের মঙ্গল প্রার্থনা করি।” বলিয়া আবার শিষ্‌ দিতে দিতে চলিয়া গেল।

 সাহেবের এই আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত ভাবপরিবর্ত্তনে বড়বাবু রামে ফুলিতে ফুলিতে হতাশভাবে চেয়ারে বসিয়া পড়িলেন। তারপর অত্যধিক মনোযোগিতার সহিত একখানা কাগজ দেখিতে দেখিতে আপন মনে অস্ফুট কণ্ঠে বলিলেন, “জলে বাস ক’রে কুমীরের সঙ্গে বিবাদ? আচ্ছা, দেখা যাবে। এক পোষে শীত পালায় না।”

 ঝড়ের আগে শুক্‌না পাতা যেমন করিয়া উড়িয়া যায়, প্রিয়নাথের প্রাণখানা দেহের আগে তেমনি ছুটিয়া চলিয়াছিল। তাহার মনে হইতেছিল, পাখীর মত যদি আমার দুখানা ডানা থাকিত!

 বাড়ী পৌছিয়া সে ভাবিল, এই ত বাড়ী আসিলাম। এইবার খোকাকে দেখিব। তার জন্যে জামা কিনিয়া আনিয়াছি; জামা পাইয়া তাহার কত আহ্লাদ হইবে!

১৫