পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 “সুরো, সুরো!”

 কাহারও সাড়া নাই! এ কি,—কে যেন কাঁদিতেছে না? কাঁদে? কে? কে? প্রিয়নাথ দু হাতে বুক চাপিয়া, কাণ পাতিয়া শুনিতে লাগিল। শুনিতে সাহস হইতেছিল না, তবু — সে শুনিতে লাগিল।

 “খোকারে, ওরে আমার থোকারে,”- কে কাঁদে? সুরো? প্রিয়নাথের দেহ হিম হইয়া গেল। আর তবেত’ সন্দেহ নাই! থর থর্‌ করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে সেইখানে সে বসিয়া পড়িল,—তাহার চোখের সামনে,—আলোকাম্বরা ধরণীর উপর কে যেন একটা অন্ধকারের পদ্দা ফেলিয়া দিল। এবং সেই কঠোর-কালো আঁধারের গভীর মৌনব্রত ভঙ্গ করিয়া, এক শোকার্ত্ত মাতৃ-হৃদয় ভেদ করিয়া কি করুণ ক্রন্দন তাহার অভিভূত শ্রবণে বারবার ধ্বনিত হইতে লাগিল, “ও খোকা, খোকারে!”

 শুনিতে শুনিতে সহসা তীব্র আঘাতে চেতনা প্রাপ্ত আহতের মত সে আবার দাঁড়াইয়া উঠিল এবং দীপ্তনেত্রে রক্তহীন মুখে উর্দ্ধে অনন্ত নীলিমার দিকে চাহিয়া ক্ষিপ্তের মত বলিল, “নিয়েছ? আর দু’দণ্ড তর্ সৈল না? ভগবান্? ভগবান্? এখন যদি একবার তোমার নাগাল পাই, তাহলে জেনো, তোমার ওই নির্দ্দর প্রাণকে এই দুই হাতের চাপে পিষে, থেঁতলে গুঁড়িয়ে,—ছুঁড়ে ফেলে দি।”

 প্রিয়নাথ উপরে উঠিল, এই ভীষণ অভিশাপ-বাণী উচ্চারণ করিতে করিতে একটা দম্‌কা বাতাসের মত ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিল। তাহাকে দেখিবামাত্র, সুরবালা বিদীর্ণকণ্ঠে একটা আর্ত্তনাদ করিয়া অচেতন হইয়া পড়িয়া গেল।

 প্রিয়নাথ চোখে এক ফোঁটা জল নাই—আপনার পাষাণ-চক্ষু মেলিয়া

১৬