প্রাণপণে সে চাহিয়া রহিল। বিছানার উপর খোকার পুষ্প-পেলব দেহ পড়িয়া আছে,—মৃত্যুর কঙ্কাল-করের কাঠিন্য এখনও তাকে ছুঁইতে পারে নাই। তার ছোট হাতদুটি মুঠা করা, কচি-কচি ঠোঁট-দুইখানির ফাঁকে মুক্তার মত দাঁতগুলি দেখা যাইতেছে। চোখদুটি মুদিয়া আছে, পাতার পাশে রাঙ্গা গালের উপর অশ্রুর শুষ্ক চিহ্ন।
‘তুই কেঁদেচিস্, ঘুমোবার আগে কেঁদেচিস্ যাদু? আবদার ভুল্তে পারিস্ নি? এই যে বাবা, জামা কিনে এনেচি। নে, পর্— জামা পর্।”
প্রিয়নাথ সন্তর্পণে কাগজের ভিতর হইতে জামাটি আস্তে আস্তে বাহির করিল। তারপর থোকাকে জামা পরাইয়া তার মৃতদেহ বুকে চাপিয়া, তার অসাড় মুখে মুখ দিয়া সেইখানে স্তম্ভিতের মত বসিয়া রহিল।
টং।—
পরদিনের বেলা সাড়ে নয়টা।
টুইলের জামা-গায়ে, কাঁধে চাদর দিয়া, হাতে ছাতা লইয়া প্রিয়নাথ বাড়ী হইতে বাহির হইল।
খোকার চিতার ধোঁয়া তখনও বুঝি মিলায় নাই,—কিন্তু কি করিবে সে? আজ যে সওদাগরের “মেলডে”—সে কেরাণী। দিনের বেলা কলম ধরিবে, রাত্রে কান্নার ছুটি মিলিবে। এখন কাঁদিবার অবকাশ নাই। আজ যে সদাগরের “মেলডে,”—সে যে কেরাণী!