পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

 বরেন্দ্রনাথ তাহার জন্য ষ্টেশনেই দাঁড়াইয়াছিলেন। তাড়াতাড়ি একটা কুলি ডাকিয়া, তাহার মাথায় সুখেন্দুর ট্রাঙ্কটি তুলিয়া দিয়া ষ্টেশন হইতে বাহির হইলেন।

 বাহিরে আসিয়া সুখেন্দু জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার বাংলো কত দূরে?”

 বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “পাঁচ মিনিটের পথ। আপনি আস্‌বেন শুনে আমার স্ত্রী যে কতটা সুখী হয়েচেন, তা আর বলা যায় না। আপনারা কবিমানুষ, তাই আপনার জন্যে তিনি পাহাড়ের দিক্‌কার একটা ঘর সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছেন; সে ঘরের জান্‌লা খুলে দিলেই সামনে পাহাড় দেখা যায়।”

 সুখেন্দু মনে মনে বরেন্দ্রনাথের স্ত্রীর এই সূক্ষ্মদৃষ্টির প্রশংসা করিয়া প্রকাশ্যে বলিল, “আপনারা ব্রাহ্ম—স্ত্রীলোককে যথেষ্ট সুশিক্ষা দেন, তাই তাঁরাও শিক্ষিত পুরুষের মনের গতি কি রকম, সেটা ভালরকমেই আন্দাজ করতে পারেন। দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি অশিক্ষিতা হতেন, তাহলে তিনি আমাকে দেখ্‌বার আগে কি এতটা বুঝেসুঝে কাজ করতে পার্ত্তেন! আমার ত মনে হয় না। আমরা সকলে এই সত্যটা বুঝতে পারি না। আমাদের অনেকে মনে করেন, স্ত্রীলোককে লেখাপড়া শেখালে তাঁরা গৃহস্থালীর দিকে আর ফিরে চাইবেন না—খালি নবেলই পড়বেন, নবেলই পড়বেন! তাই এদেশের বেশীর ভাগ স্ত্রীলোকই স্বামীর শয্যা-সঙ্গিনী মাত্র—সহধর্ম্মিণী নন্। স্ত্রীলোককে আমরা শুধু অশিক্ষিতা রাখি না—বাইরের পৃথিবী থেকে একরকম নির্ব্বাসিত করে রাখি। আর বাড়ীর ভেতরেও কি তাঁদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে! অন্তঃপুরেও ঘোমটা দিয়ে

২৩