পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

বেগুনী! চলিবার পথটি কিছুদুর অগ্রসর হইয়া একটি কৃত্রিম নির্ঝরকে বেষ্টন করিয়া দ্বিধাবিভক্ত হইয়া গিয়াছে। নির্ঝরের বারিরাশি ঊর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত হইয়া সূর্য্যকর মাখিয়া নিম্নের কতগুলি প্রস্তরগঠিত নৃত্যশীল শিশুর উপরে ঝরিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে। তার সম্মুখেই বাংলো! এই বাগানঘেরা বাংলোথানির দিকে চাহিলেই বুঝা যায়, ইহার অধিকারীর সথ আছে, রুচি আছে, পয়সা আছে।

 সুখেন্দুকে লইয়া বরেন্দ্রনাথ বাহিরের বসিবার ঘরে প্রবেশ করিলেন। সুখেন্দুর সুমুখে একখানা চেয়ার টানিয়া দিয়া বলিলেন, “বসুন। ততক্ষণে আমি ভেতরে গিয়ে আমার স্ত্রীকে ডেকে আনি। আগে তাঁর সঙ্গে আপনার পরিচয় হওয়াটা দরকার।”

 সুখেন্দু বসিয়া বসিয়া ঘরখানি দেখিতে লাগিল। দেয়ালে খানকতক ছবি, একটি মার্ব্বেলের টেবিল ঘিরিয়া কয়খানা বেণ্টউড, এককোণে ইজি চেয়ার ও তার পাশে একটি টেবিল-হার্‌মোনিয়াম ছাড়া ঘরের ভিতরে ঘরে আর কোন সরঞ্জাম ছিল না। কিন্তু সাজাইতে জানিলে সরঞ্জাম অল্প বলিয়া গৃহসজ্জার কোনই ত্রুটি ঘটে না। সুখেন্দুও সেই কথা ভাবিতেছিল; কারণ, এই ঘরখানির সরল সজ্জাকৌশলের ভিতরে সে দুইখানি সুনিপুণ হস্তের সন্ধান পাইয়াছিল।

 এমন সময়ে পিছনে পদশব্দ শুনিয়া তাড়াতাড়ি সে উঠিয়া দাঁড়াইল। ফিরিয়া দেখিল, একটি রমণীর হাত ধরিয়া বরেন্দ্রনাথ হাসিতে হাসিতে আসিতেছেন। দেখিয়া, সুখেন্দু একটু সঙ্কুচিত ভাবে মাথা নীচু করিল।

 তাহার সাম্‌নে আসিয়া বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “সুখেন্দুবাবু, ইনিই আমার গৃহিণী—আর ইনি হচ্ছেন সুখেন্দুবাবু!”

২৫