পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সুখেন্দু নমস্কার করিয়া মুখ তুলিল; কিন্তু রমণীর দিকে চাহিয়াই তাহার দৃষ্টি স্থির হইয়া গেল। সে মুখ যে বড়-চেনা! আজ অনেক বছর সে মুখ দেখে নাই বটে, এবং আর যে কখনও দেখিবে এ আশাও তার ছিল না বটে, কিন্তু এই অদর্শন ও হতাশা সেই প্রিয় মুখের স্মৃতি কিছুমাত্র মলিন করিতে পারে নাই—ও মুখের প্রতি রেখাটি, প্রতি তিলটি পর্য্যন্ত তার কাছে সুপরিচিত! সুখেন্দু বিমূঢ়ের মত অবাক্ হইয়া চাহিয়া রহিল।

 মিসেস্ মজুমদারেরও সেই অবস্থা।

 জড়িতস্বরে সুখেন্দু কহিল, “সরযু!”

 স্বপ্নাবিষ্টার মত মিসেস্ মজুমদার বলিলেন, “সুখেন্দু!”

 বরেন্দ্রনাথ খানিকক্ষণ নির্ব্বাক্‌ভাবে একবার নিজের স্ত্রীর দিকে, আর একবার সুখেন্দুর দিকে ঘন ঘন চাহিতে লাগিলেন। তিনি একেবারে হতভম্ব হইয়া গিয়াছিলেন। বিস্ময়ের প্রথম মুহূর্ত্ত কাটিয়া গেলে পর তিনি বলিলেন, “ব্যাপার কি! দুজনের ভেতরে ‘মেণ্ট্যাল্‌ টেলিপ্যাথি’তে আগে থাক্‌তেই চেনাশুনো হয়ে গেছে না কি? এযে অবাক্ কাণ্ড—অ্যাঁ!”

 ততক্ষণে সুখেন্দু আত্মসংবরণ করিয়াছে। ধীরে ধীরে সে বলিল, “বরেন্দ্রবাবু, সরযূ যে আপনার স্ত্রী আগে তা জানতুম্ না। সরযুর সঙ্গে ছেলেবেলাই আমার আলাপ হয়েছিল, সরযূর পিতা তখন আমাদের দেশ—শান্তিপুরেই থাক্‌তেন। তারপর আজ আট বছর সরযূর কোন খবর জানি না।”

 বরেন্দ্রনাথ মস্তক আন্দোলন করিয়া কৌতুকভরে বলিলেন, “বটে, বটে, বটে!”

২৬