পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

জানিবার দরকারও ছিল না। এখন জানিয়াছে, সে ছিল ভাই-বোনের ভালবাসা।

 তারপর, সরযূও বড় হইল, সেও বড় হইল। লেখাপড়া শিখিবার জন্য সে কলিকাতায় গেল। ছুটির সময় দেশে আসিলে, সরযূর সঙ্গে দেখা হইত। কিন্তু তখন আর তারা খেলা করিত না— সে সময় তখন গিয়াছে। তখনও তারা কথা কহিত— কিন্তু সে শিশুর কথা নয়, পুস্তকের কথা, জ্ঞানের কথা, নানা দেশের কথা!

 দেবেন্দ্রবাবু ছিলেন ব্রাহ্ম। মেয়েকে যত্ন করিয়া তিনি লেখা-পড়া শিখাইয়াছিলেন। তাই সরযূও তার কথা বুঝিতে পারিত, তার মন বুঝিতে পারিত, বোকার মত তার মুখের দিকে হাঁ করিয়া চাহিয়া থাকিত না।

 দুজনের এই ভালবাসা উভয়পক্ষের অভিভাবকগণ সস্নেহে লক্ষ্য করিয়াছিলেন। তাহার পিতামাতার ইচ্ছা ছিল সরযূকে পুত্রবধূ করেন। ইহাতে দেবেন্দ্রবাবুরও অমত ছিল না। কিন্তু উভয় পক্ষের ধর্ম্মভেদ এই ইচ্ছা সফল হইতে দিল না।

 এমন সময়ে দেবেন্দ্রবাবু অন্যত্র বদ্‌লি হইলেন। যাইবার দিন সে, সরযূর হাতে হাত রাখিয়া পূর্ণদৃষ্টিতে সরযূর মুখের দিকে চাহিয়াছিল। তাহারা কেহ কোন কথা কহিল না—কেবল বিষাদম্লান দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে চাহিয়া রহিল। বাক্য তাঁহাদের মনের ব্যথা প্রকাশ করিতে পারিল না—কিন্তু সেই মৌন দৃষ্টি তাহাদের কাতর হৃদয়কে প্রকাশ করিয়া দিল। নীরব সন্ধ্যার সেই আসন্ন অন্ধকারে চিরদিনের জন্য সে সরযূর কম্পিত স্কন্ধের উপরে আপনার ভারাক্রান্ত মস্তক রাখিয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিয়াছিল

২৮