পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

 সরযূ চায়ের পিয়ালার দিকে আরও বেশীরকম মনোযোগ দিল।

 সুখেন্দু একবার সরযূর দিকে চাহিয়া হাসিতে হাসিতে বলিল, “বেজায় দুষ্ট! একটি উদাহরণ দিচ্ছি, শুনুন।”

 সরযূর রক্তারক্ত মুখ টেবিলের উপরে একেবারে ঝুঁকিয়া পড়িল।

 সুখেন্দু সে দিকে দৃষ্টিপাত না করিয়া বলিল, “হ্যাঁ— শুনুন। একবার আমার মা, সরযূ আর আমাকে একএকটি রসগোল্লা দেন। আমি বুদ্ধিমানের মত রসগোল্লাটী টপ্ করে মুখের ভেতরে ফেলে দিলাম। কিন্তু একটি রসগোল্লায় সরযূর মন কিছুতেই উঠল না। রসগোল্লাটী অনেকক্ষণ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখে উনি সেটিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বল্লেন, ‘আমি এক্‌তা খাবুন না—হতো খাবুন!’ খাবুনটা কি বুঝেচেন? উনি তখন ‘খাব’ বল্‌তেন না—‘খাবুন্’ বল্‌তেন। ছেলেবেলা থেকেই মৌলিকতার প্রতি ওঁর এতটা ঝোঁক ছিল!”

 সরলপ্রাণ বরেন্দ্রনাথ ততক্ষণে দুইহাতে পেট চাপিয়া হাসিয়া হাসিয়া প্রায় মারা পড়িবার যোগ হইয়াছেন। অনেক কষ্টে শেষটা হাসি থামাইয়া তিনি চেয়ারের উপরে সোজা হইয়া বসিয়া বলিলেন, “বটে, বটে বটে!”

 সরযু সকোপকটাক্ষে সুখেন্দুর দিকে চাহিয়া তাড়াতাড়ি সে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল।

 বরেন্দ্রনাথ কহিলেন, “ওগো, যেও না, রেও না! তুমি গেলে আমরাও তোমার পশ্চাতে ধাবমান হব।”

 সরযূ অভিমানের সুরে বলিল, “আমাকে একলা পেয়ে এমন করে জব্দ করা হবে, আর আমি বুঝি চুপটি করে বসে বসে তাই সইব?”

৩১