বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “কেন, তুমিও তোমার পক্ষসমর্থন কর্তে পার।”
সরযু ভুরু বাঁকাইয়া বলিল, “যাও, যাও, অত রসিকতায় আর কাজ নেই! ভালমানুষের মত চা খাবে ত’ খাও, নইলে আমি কখ্খনো এখানে থাক্বোনা, কখ্খনো না! আগে থাক্তে এ কথা বলে রাখলুম কিন্তু!” বলিয়া, সরযূ আবার আস্তে আস্তে আসনে আসিয়া বসিল।
চা-পান করিতে করিতে বরেন্দ্রনাথ ভিন্ন প্রসঙ্গ তুলিলেন। বলিলেন, “আচ্ছা সুখেন্দুবাবু, আমি লক্ষ্য করে দেখেচি, আপনার অধিকাংশ লেখার ভেতরে কেমন একটা চাপা বেদনার সুর আছে। অথচ, লোকের সঙ্গে কথাবর্ত্তায় আপনি ত’ বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি কর্তে পারেন! এর কারণ কি?”
প্রশ্ন শুনিয়া সুখেন্দুর মুখ মলিন হইয়া গেল। অনেকক্ষণ সে চুপ করিয়া রহিল। তারপর চায়ের পিয়ালাটি টেবিলের উপরে নামাইয়া রাখিয়া নিম্নস্বরে বলিল, “আপনি যে আমার লেখার ভেতরে এতটা লক্ষ্য করচেন, তা আমি জানতাম না। দেখুন বরেনবাবু, লোকে বাইরের কথাবার্তায় আপনাকে ভুলতে চায়, কিন্তু লেখায় যে যথার্থ প্রাণটী আপনি প্রকাশ হয়ে যায়! হয় ত’ আমার প্রাণের সুর - বেদনার সুর। তাই লেখাতেও সেটা বেজে ওঠে। কৃত্রিমতা নিয়ে আপনাকে ঢাকা দিয়ে ত’ সাহিত্য সৃষ্টি হয় না বরেনবাবু! যে লেখায় লেখক নিজে হাসেন, সে লেখায় পাঠকও না হেসে পারে না। যে লেখায় লেখক নিজে কাঁদেন, সে লেখা পড়ে পাঠককেও কাঁদ্তে হয়। আর পাঠকদলকে নিয়েই যখন আমাদের কারবার, তখন প্রাণের আসল রূপটিকে আমরা লেখাতে ফোটাতে বাধ্য।”