বরেন্দ্রবাবু বলিলেন, “তাহলে আপনার লেখা পড়ে বলতে হয়, আপনার প্রাণের ভেতরে যাতনা আছে।”
সুখেন্দু অস্ফুট স্বরে বলিল, “যা মনে করেন।”
বরেন্দ্রবাবু চায়ের পিয়ালায় চুমুক্ দিয়া কহিলেন, “সুখেন্দুবাবু, রকম প্রাণ নিয়েত’ সংসার করা চলে না।”
সুখেন্দু চা পান শেষ করিয়া পিয়ালাটি সরাইয়া রাখিয়া বলিল, “তা আমি জানি। তাই বিবাহ করাও আর হয়ে উঠ্ল না। সংসারের সঙ্গে আমার জীবনের সম্পর্ক কি?”
সুখেন্দু যে বিবাহ করে নাই, সরযূ একথা জানিত না। আজ সুখেন্দুর মুখে এই কথা ও তাহার অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর শুনিয়া সে চমকিয়া উঠিল। পাছে তাহার মুখের ভাব সুখেন্দুর নজরে পড়ে, সেই ভয়ে সে তাড়াতাড়ি আলোর দিকে পিছন ফিরিয়া বসিল।
বরেন্দ্রনাথেরও চা-পান শেষ হইল। তিনি টেবিলের ধার হইতে উঠিয়া ইজিচেয়ারের উপরে গিয়া পা ছড়াইয়া দিয়া শুইয়া পড়িলেন। খানিকক্ষণ সকলেই নীরব হইয়া রহিলেন। লতাও অনেকক্ষণ আগে একটা কাচের পুতুলকে বুকের উপরে দুই হাতে চাপিয়া ধরিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল।
এরকম চুপচাপ বসিয়া থাকা বরেন্দ্রনাথের স্বভাব নয়। সকলের আগে তিনিই কথা কহিলেন। বলিলেন, “একি, সব যে থেমেথুমে পড়্ল! এখনো রাত হয়নি, খাবার হতে অনেক দেরি। এতটা সময় কি করা যায়? আচ্ছা, তুমি একটা গান গাও গো,—ওঠ!”
কথাটা সরযূকে লক্ষ্য করিয়া বলা হইয়াছিল। সরযূ ম্লানভাবে বলিল, “আমার আজ গলা ভাল নেই,— আমি গাইতে পার্ব্ব না।”