বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “গলার জন্যে কিছু এসে যাবে না। এখানে ত’ বাইরের কোন লোক আর উপস্থিত নেই! নাও,—উঠে পড়।”
সরযূ ঘাড় নাড়িয়া দৃঢ়ভাবে অপত্তি জানাইয়া বলিল, “না, আমি কিছুতেই গাইতে পার্ব্ব না।”
বরেন্দ্রনাথ তখন হতাশভাবে সুখেন্দুর দিকে চাহিয়া বলিলেন, “সুখেন্দু বাবু, তবে আপনি উঠুন।”
সুখেন্দু বলিল, “আমি? আমার ত’ তেমন গলা নেই।”
বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “না, সে হবে না; আপনাকে গাইতেই হবে।”
সুখেন্দু আরও দুচারবার আপত্তি জানাইল, কিন্তু বরেন্দ্রনাথ যখন কিছুতেই ছাড়িলেন না, তখন অগত্যা তাহাকে উঠিতে হইল।
হার্মোনিয়ামের চাবিগুলির উপরে একবার হাত চালাইয়া একটা নির্দ্দিষ্ট সুরে গিয়া থামিয়া সুখেন্দু জিজ্ঞাসা করিল, “কি গাইব?”
হারমোনিয়ামের সুর শুনিয়াই বরেন্দ্রবাবুর তন্দ্রার উপক্রম হইয়াছিল। তিনি জড়িতস্বরে বলিলেন, “রবিবাবুর একটা গান।”
বরেন্দ্রবাবুর তন্দ্রা আসিয়াছে, সরযূ এটা বুঝিতে পারিয়াছিল। এই অদ্ভুত সঙ্গীতরসজ্ঞ অপূর্ব্ব শ্রোতাটির স্বভাব তাহার পূর্ব্ব হইতেই জানা ছিল। সে জানিত, গান সুরু করিতে না করিতেই তাহার স্বামী স্বপ্ন দেখিতে সুরু করিবেন।
সুখেন্দু গায়িল—
যদি বারণ কর তবে গাহিব না—
যদি সরম লাগে তবে চাহিব না।