যদি তোমার ও নদীকূলে
ভুলিয়া ঢেউ তুলে
আমার এ ভাঙ্গা তরী
বাহিব না—
সুখেন্দু গায়িতে লাগিল,,—এ গান তার প্রথম যৌবনের প্রিয় গান! সে একদিন ছিল—যেদিন তাহারই মুখে এ গান সরযূ কতবার শুনিয়াছে! আজ আবার কতদিন— কতদিন পরে সেই শ্রোতার সামনেই এই যৌবনের গীতি তাহার কণ্ঠে ফুটিয়। উঠিল— তাই সুখেন্দুও প্রাণের সমস্ত আবেগ, সমস্ত ভাব দিয়| হৃদয়কে সুরে পরিণত করিয়া, স্থানকালপাত্র সমস্ত ভুলিয়া গায়িতে লাগিল। তাহার অতীত জীবনের শেষের দিক্টা যেন তাহার স্মৃতিপট হইতে একবারে মুছিয়া গিয়া জাগিয়া উঠিল,—সেদিনকার স্বপ্নচ্ছবি—যেদিন তাহার চিত্ত-মুরলীতে যৌবনের প্রথম উদ্বোধনসঙ্গ ত ধ্বনিয়। উঠিয়াছিল, যেদিন ঐ মুক্ত-উদার বিপুল নীলিমার তলায় তাদের একান্ত-আপন ছোট্ট মানস-লোকে সে আর সরযূ—সরযূ আর সে ছাড়া তৃতীয় ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল না! হায় রে, সেদিন কি ভুলিবার?
সুখেন্দু আলোকের দিকে পিছন করিয়া একাগ্রমনে গান গায়িতেছিল। হঠাৎ হার্মোনিয়ামের উপরে পিছন হইতে কাহার ছায়া পড়িল! সেইসঙ্গে সে আপনার মস্তকে যেন কাহার তপ্ত শ্বাস অনুভব করিল! অত্যন্ত চমকিয়া মুখ ফিরিয়া সে দেখিল, শবের মত রক্তহীন মুখ লইয়া ঠিক্ তাহার পশ্চাতে দাঁড়াইয়া, সরযূ!
তাহার গান ও হার্মোনিয়ামের সুর একসঙ্গে সহসা থামিয়া গেল।