পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 অতি অস্ফুট, কম্পিত, কাতর স্বরে সরযূ বলিল, “পায়ে পড়ি—পায়ে পড়ি—এ গান আর গেয়ো না।”

 সুখেন্দু পাথরের মূর্ত্তির মত আড়ষ্ট হইয়া বসিয়া রহিল। যখন ফিরিয়া চাহিল,—দেখিল, ঘরের ভিতরে সরযূ নাই এবং বরেন্দ্রবাবু ‘অঘোরে’ ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন।

 সুখেন্দু অনুতপ্ত চিত্তে যখন শয্যায় আশ্রয়গ্রহণ করিল, তখন অনেক রাত।

 তাহার প্রাণ তখন যাতনায় যেন ভাঙ্গিয়া পড়িতে চাহিতেছিল। আপনাকে সে আপনি প্রবোধ দিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু পারিল না। বেশ বুঝিয়াছিল যে, আপনার অজ্ঞাতসারে সে একটা অমার্জ্জনীয় অপরাধ করিয়া বসিয়াছে। অপরাধ? কি অপরাধ? কি যে সে অপরাধ, সেটা সে ভাল করিয়া আন্দাজ করিতে পারিল ন!—সেটাকে সে একটা নির্দ্দিষ্ট সীমানার ভিতরে ধরিতে পারিল না।

 তবে এটা ঠিক্, সেই গানটা গাওয়া তার পক্ষে উচিত হয় নাই। একটা সামান্য গান যে এতটা অপকার করিতে পারে, সংসারের পনেরোআনা দৃষ্টিহীন লোক এ কথা মানিবে না। কিন্তু তার মত লোকের পক্ষে বোঝা উচিত ছিল যে, অবস্থাবিশেষে পূর্ব্ব-স্মৃতি-উদ্দীপক একটা সঙ্গীত বা একটা সামান্য ভঙ্গী পর্য্যন্ত মানুষের দুর্ব্বল চিত্তের ভিতর কত বড় ছেদী করিয়া দিতে পারে। খড়ের বোঝার ভিতরে একটা মস্ত মশাল ফেলিয়া দিলে যে কার্য্যসাধন

৩৬