পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

করে, একটুখানি আগুনের ফিন্‌কিও তার চেয়ে কিছুমাত্র কম কাজ করে না।

 তার চোখের সামনে আজ আর একটা সত্য আত্মপ্রকাশ করিয়াছে! সরযূ এখনও তাকে ভুলিতে পারে নাই—সে এখনও তাকে ভালবাসে! হাঁ, নিশ্চয়ই। নহিলে পূর্ব্বকালের গান শুনিয়া সে অমনভাবে বিচলিত হইল কেন? যে মাটি নরম, সেই মাটিতেই পায়ের দাগ বসে, শক্ত মাটিতে বসে না। তাহার প্রতি সরযূর যদি একটুও টান না থাকিত, তবে গান শুনিয়া তাহার মনে কোনরূপ বিকৃতি হইত না। আচ্ছা, সরযূ আমাকে গান গায়িতে মানা করিল কেন? বোধ হয় তাহার দুর্ব্বল মন আমার দিকে অন্যায়রূপে আকৃষ্ট হইয়া পাছে তাহাকে কর্ত্তব্যপথ হইতে সরাইয়া লইয়া যায়, সেই ভয়ে!

 ছি ছি মনের আবেগে কি ভয়ানক ভুল করিতে বসিয়াছিলাম!

 সে তাকে ভালবাসে! কিন্তু এ ভালবাসায় আজ আর তাহার কোন দাবী-দাওয়া নাই। সে যে পর-স্ত্রী! সরযুর কথা ভাবাও আজ তার পক্ষে অন্যায়।

 সুখেন্দু এই ভয়ানক সত্যটা প্রাণপণে ভুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। অন্ধকারের ভিতরে জড়সড় হইয়া শুইয়া মনে মনে সে বারংবার উচ্চারণ করিতে লাগিল, ইহা মিথ্যা, ইহা মিথ্যা! ঈশ্বর! আমাকে দয়া কর, আমার বুকে বল দাও, ইহা মিথ্যা করিয়া দাও! আমি ক্ষীণবল, হীনপ্রাণ—আমাকে এমন করিয়া পথে ফেলিয়া দিও না— আমাকে বাঁচাও প্রভু, বাঁচাও! ইহা মিথ্যা!

 কিন্তু, সত্য কি কঠোর! সে যত অন্য কথা ভাবিয়া সেই ভীষণ

৩৭