পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

কথাকে চাপা দিবার চেষ্টা করিতে লাগিল, কথাটা ততই যেন বড় হইয়া, স্পষ্ট হইয়া তাহার মনের দরজা খুলিয়া বাহিরে আসিবার জন্য জোর করিতে লাগিল। সত্যটা ভয়ানক—কিন্তু, কিন্তু—কি মধুর! মনের ভিতর হইতে কে যেন তাহাকে ডাকিয়া ডাকিয়া, আর কোন মানা না মানিয়া ক্রমাগত তাহাকে বলিতে লাগিল, সরযূ তাকে ভালবাসে, সরযূ তাকে ভালবাসে, সরযূ তাকে ভালবাসে!

 মনের সঙ্গে যুঝিয়া যুঝিয়া আর সে পারিল না। পাগলের মত তাড়াতাড়ি বিছানা হইতে উঠিয়া, ছুটিয়া গিয়া সে একটা জানালা খুলিয়া দিল। অমনি বাহির হইতে উদ্দাম বাতাস আসিয়া তাহার উন্মুক্ত বক্ষকে চারিদিক্ হইতে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল— আঃ! কি স্নিগ্ধ, কি মধুর সে বাতাস!

 অতি অস্পষ্ট চন্দ্রলেখায় সুদূরের শৈলমালা একটা ঘনীভূত বিরাট্ ছায়ার মত দেখাইতেছিল। সে যেন তার অন্ধকার হৃদয়ের বহির্বিকশিত প্রতিবিম্ব! চেয়ারের উপরে বসিয়া, জানালার কাঠের উপরে মাথা রাখিয়া সেইদিকে সে নিষ্পলকনেত্রে চাহিয়া রহিল! আকাশে, কোথায় তখন একটা চাতক পাখী থামিয়া থামিয়া কাতরে ডাকিতেছিল—‘ফটিক জল!’ সেই তৃষিত কণ্ঠের করুণ কামনা শুনিতে শুনিতে তাহার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে বিরামদায়িনী নিদ্রা আসিয়া কখন যে তার চোখের পাতা বন্ধ করিয়া দিল, তাহা সে জানিতেও পারিল না।

 ডাক্তার মানুষের কপালে ঈশ্বর শান্তি লিখেন নাই। বরেন্দ্রবাবু

৩৮