করিয়া এবং এই অন্যায় ব্যবহার স্মরণ করিয়া সরযূর উপরে সে বড়ই বিরক্ত হইয়া উঠিল! কিন্তু একবারও তলাইয়া বুঝিল না যে, যাহার উপরে রাগ করিয়া দোষ দিতেছে, তাহার উপরে তার আর কোন দাবি-দাওয়া নাই! সে তার পরিচিত বটে, কিন্তু সে আজ অপরের ধর্ম্মপত্নী।
বৈকালে বরেন্দ্রনাথ, সুখেন্দু ও সরযূকে সঙ্গে করিয়া নদীর দিকে চলিলেন। সরযূ সহজে বেড়াইতে যাইতে রাজি হয় নাই। বরেন্দ্রনাথ তাহাকে একরূপ জোর করিয়াই বাহিরে টানিয়া আনিলেন।
কিন্তু বাড়ীর বাহিরে পা দিতে না দিতেই একজন লোক আসিয়া হাজির। তাহার ভায়ের অসুখ বড় বাড়িয়াছে, ডাক্তারবাবুকে একবার যাইতেই হইবে।
বরেন্দ্রনাথ হতাশভাবে বলিলেন, “বটে, বটে, বটে! তা, তোমরা আমাকে জ্বালালে বাপু! আমাকে কি একটু হাঁফ ছাড়তেও দেবে না? দম আট্কে মরে যাব যে বাবা!”
লোকটা লম্বা সেলাম ঠুকিয়া নিবেদন করিল যে, রোগীর ধারণা হইয়াছে, বরেন্দ্রবাবু ‘ডাগ ডর্’ তাহাকে ‘দাওয়াই’ না দিলে তাহার ‘জান,’ কিছুতেই বাঁচিবে না।
মনে মনে খুসী হইয়া বরেন্দ্রবাবু বলিলেন, “রোগীদের বুদ্ধি-সুদ্ধি এতটা তীক্ষ্ণ হলে আমাকেও জান্ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হতে হবে দেখচি। চল বাবা চল—ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েঞ্জ ধান্ ভানে, কল্কাতা ছাড়লেও রোগী ছাড়ে না!—সুখন্দু বাবু, আপনি ওকে নিয়ে নদীর ধারে যান! শীগ্গীর ছাড়ান্ পাই যদি, তাহলে আমিও একটু পরে গিয়ে সঙ্গে যোগ দেব!”