সরযূ কহিল, “আজ তবে গিয়ে কাজ নেই।”
সুখেন্দুও বলিল, “সেই ভাল।”
কিন্তু বরেন্দ্রনাথ প্রবলভাবে মস্তকান্দোলন করিয়া বলিলেন, “স্ত্রী-বুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী সুখেন্দুবাবু! বেড়িয়ে এলে মাথার যাতনা সেরে যাবে! কিচ্ছু বোঝেন না, আবার বলা হচ্চে গিয়ে কাজ নেই! হুঃ—শেষটা ঘরে রোগী, বাইরে রোগী নিয়ে আমার হেঁটে কাঁটা উপরে কাঁটা হোক্ আর কি!”
সরযূ কহিল, “আমার ব্যথা সেরে গেছে!”
বরেন্দ্রনাথ বলিলেন, “ভ্রম, মনের ভ্রম! ব্যথা ঠিক্ আছে, ঘরে গেলেই বাড়বে। আর, সেরেও গিয়ে থাকে যদি—সাবধানের মার নেই। যাও বেড়িয়ে এস।”
সরযূ আর কিছু বলিতে সাহস করিল না।
সুখেন্দু বুঝিল, তাহার সঙ্গে পাছে বেড়াইতে যাইতে হয়, সেই ভয়ই সরযুর এই অনিচ্ছার কারণ। এ কথাটা বোঝা অত্যন্ত সহজ; এবং বুঝিয়া অবধি তাহার বুকের মাঝে একটা যাতনা জাগিয়া তাহার সকল শান্তি নষ্ট করিয়া দিল। একদিন যে সরযূ একলহমা তাহাকে না দেখিলে কাঁদিয়া সারা হইত, একি সেই সরযূ! আশ্চর্য্য!
তখন দূরের পাহাড়ের আড়ালে সূর্য্য ধীরে ধীরে নামিয়া যাইতেছিল।
নীলিমার পেলব পটে কোন্ অদৃশ্য চিত্রকর রঙিন্ আলোর রং দিয়া বিচিত্র চিত্র আঁকিতেছিল, তাহার ছটায় সুদূরের বন-ভূমির নবীন শ্যামলতা সমুজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে। মাঝে মাঝে সাদা বকের ঝাঁক্ উড়িয়া যাইতেছে, হঠাৎ দেখিলে মনে হয়, কানন-রাণীর গলায় যেন বিনি-সূতায় গাঁথা বেল্ ফুলের মালা দুলিতেছে।