পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 দুধারের ধূধূ, অসমতল ময়দানের মাঝখানে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ দিয়া সুখেন্দু মুগ্ধনেত্রে চারিদিক্ দেখিতে দেখিতে যাইতেছিল। একবার সরযূর মুখের দিকে তাকাইয়া সে কহিল, “আমরা সহরের ভেতরে প্রকৃতির এই আশীর্ব্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকি। এ সব দৃশ্য কি সুধু দেখার জন্যে দেখা? তা ত নয়! এ সব দেখ্‌লে প্রাণের ভেতরে শান্তি আসে, মনের সঙ্কীর্ণতা দূর হয়ে যায়, মানুষ বুঝ্‌তে পারে যে এই সুন্দর বিশ্বে সে শুধু টাকা-আনা পয়সার হিসেব করতে জন্মায়নি। বাস্তবিক, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য আমাদের যে শিক্ষা দিতে পারে, হাজার হাজার পুঁথি তা পারে না।”

 সুখেন্দু আপন মনে গড়্‌গড়্‌ করিয়া বলিয়া যাইতেছিল, সরযূ শুনিতেছে কি শুনিতেছে না, সে খেয়াল্ তাহার মোটেই ছিল না বলিতে বলিতে হঠাৎ সে ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিল, মাথা হেঁট করিয়া সরযু নীরবে চলিয়া যাইতেছে, তাহার মুখ সম্পূর্ণ ভাবহীন। সুখেন্দুর একটা কথাও সে শুনিতে পাইয়াছিল কি না সন্দেহ!

 সুখেন্দু জিজ্ঞাসা করিল, “সরযূ, তোমার কি ভাল লাগচে না?

 “না।”

 “তোমার কি অসুখ করেচে?”

 “না।”

 “তবে?”

 “জানি না।”

 তাহার এই একান্ত সংক্ষিপ্ত উত্তরে ও প্রচ্ছন্ন বিরক্তির ভাবে সুখেন্দু আপনাকে অত্যন্ত অপমানিত জ্ঞান করিল। কেন, তাহার কি দোষ? সুখেন্দু স্বভাবতঃ অভিমানী ও ভাবপ্রবণ প্রকৃতির লোক। এই

৪২