পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

প্রকৃতির লোকেরা, কোমলপ্রাণ হইলেও অতি তুচ্ছ একটা কথাতেও অত্যন্ত বেশীরকম আঘাত পায়। তাহাদের কোমলতাই, তাহাদের দুর্ব্বলতা। সুখেন্দু, সরযূকে কি একটা অপ্রিয় কথা বলিতে যাইতেছিল-কিন্তু অনেক কষ্টে সে আত্মসংবরণ করিল।

 ততক্ষণে তাহারা নদীর ধারে আসিয়া পড়িয়াছে। বৎসরের অন্য সময়ে এই নদীর দুধারে মানব এবং নানা পশু-পক্ষীর পদচিহ্ন বক্ষে লইয়া, যে দীর্ঘ বালুকাধবল তট, শীর্ণ কঙ্কালের মত পড়িয়া থাকে, আজ বর্ষাকালে অজস্র বৃষ্টি জলধারায় পরিপুষ্ট হইয়া সে কঙ্কাল একেবারে ঢাকা পড়িয়া গিয়াছে ৷

 সরযূ বলিল, “বেড়ান ত’ হ’ল—এখন চল।”

 সরযূ অত্যন্ত নীরস স্বরে কথাগুলি বলিল; যেন সুখেন্দুই তাহার অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাহাকে জোর করিয়া এখানে ধরিয়া আনিয়াছে! একান্ত ক্রোধে সুখেন্দুর মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল সে আর সহ্য করিতে পারিল না। ডাকিল,—

 “সরযূ!”

 তাহার কণ্ঠস্বরে চমকিয়া সরযূ চোখ তুলিয়া চাহিল; চাহিয়াই আবার দৃষ্টি নত করিল।

 সুখেন্দু তিক্তস্বরে বলিল, “সরযূ, তোমার কাছে আমি কি দোষ করেচি যে, তুমি কথায় কথায় আমাকে এতটা উপেক্ষা কর্‌চ?”

 সরযূর দেহ একবার কাঁপিয়া উঠিল, কিন্তু সে কোন কথা কহিতে পারিল না।

 সুখেন্দু তীব্রস্বরে বলিল, “আমি এসে পর্য্যন্ত দেখচি, তুমি আমার সঙ্গে ভাল করে কথা কইচ না, আমার সামনে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে

৪৩