পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

পালিয়ে বেড়াচ্চ, আমার সঙ্গে যে আগে তোমার পরিচয় ছিল, — সেটা বলতেও যেন তুমি লজ্জা পাও—আমি যেন একটা আপদের মত তোমাদের ঘাড়ে এসে পড়েচি—যেন আমি চলে গেলেই তুমি বাঁচ—”

 হঠাৎ বাধা দিরা সরযূ বলিয়া উঠিল “হ্যাঁ— হ্যাঁ— তুমি চলে যাও-তুমি চলে যাও! তাহলে আমি বাঁচি!”

 সহসা একটা উচ্চস্থান হইতে কোন মানুষকে ধাক্কা মারিলে তাহার মুখ মুহূর্ত্তে যেমন বিবর্ণ হইয়া যায়, সুখেন্দুর মুখের ভাবটাও ঠিক তেমনি হইল। সে নির্ব্বাক্ হইয়া দুইহস্তে আপনার অপমান ও বেদন-কাতর বক্ষ চাপিয়া ধরিয়া অনেকক্ষণ তটিনীর উপলাহত চঞ্চল স্রোতের দিকে পলক-হারা চোখে চাহিয়া রহিল। সরযূও একটা ক্ষুদ্র শৈলের উপরে একান্ত অবসন্নের মত বসিয়া পড়িল। তাহার শ্বাস যেন তখন বন্ধ হইয়া আসিতেছে! সুখেন্দুকে এত বড় একটা কঠিন কথা বলা তাহার উদ্দেশ্য ছিল না—ক্ষণিক দুর্ব্বলতায় এমন একটা কথা তাহার মুখ দিয়া বাহির হইয়া যাওয়াতে অনুতাপে এখন তাহার অন্তর যেন পুড়িয়া যাইতে লাগিল। বিশেষ, সুখেন্দু যদি তাহার অপরিচিত হইত, তবে তাহার মুখ হইতে হয়ত এমন কথা বাহির হইতে পারিত না। সুখেন্দুকে বাল্যকালে সে এমন কর্কশ কথা কতবার বলিয়াছে,—কিন্তু সুখেন্দু, তখন তাহার ক্রোধ বা বিরক্তি, গ্রাহ্যের ভিতরেই আনিত না! কিন্তু, আজত’ আর সেদিন নাই!

 বহুক্ষণ পরে প্রথমেই সুখেন্দু কথা কহিল। ধীরে ধীরে বলিল, “চোখের আড়াল হলেই মানুষ মানুষকে ভুলে যায় —দুনিয়ার গতিক এই। কিন্তু অকারণে, বিনাদোষে মানুষ যে মানুষকে এমনভাবে অপমান করতে

88