পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

পারে, এ জ্ঞান আমার ছিল না। আমি ত’ তোমার কথা ভুলে গিয়েছিলাম সরযু! তবে, কেন তুমি আমাকে ডেকে এনে আমার সুমুখে এসে দাঁড়ালে? আপনাকে নিয়ে আমি আপনিত’ বেশ ছিলাম, তুমি না ডাক্‌লে আমিত’ আস্‌তাম না—ডেকে এনে একি ব্যবহার? সরষু, সরযূ, এ কোন্ দেশের অতিথি-সৎকার?”

 সরযূ কাঁপিতে কাঁপিতে সুখেন্দুর সামনে আসিয়া দাঁড়াইল। তাহার পর ভূতলে জানু পাতিয়া বসিয়া পড়িয়া অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠে থামিয়া থামিয়া কহিল, “মাপ কর! আমার অবস্থা যদি বুঝ্‌তে!—”

 চারিদিক্ হইতে কিসের একটা শব্দ উঠিল। দুইজনেই অত্যন্ত চমকিত হইয়া মুখ তুলিয়া দেখিল, আকাশ মেঘে মেঘে মেঘময় এবং সেই নিকষ-কালো জলদ-পটে রহিয়া রহিয়া বিজলী, আগুনের ক্ষণিক আখর লিখিয়া দিতেছে! নিবিড় ধূলারাশির ভিতরে উচ্চ তরু-শিরগুলা দুলিয়া দুলিয়া মাতালের মত নত হইয়া পড়িতেছে—এবং ঝোড়ো বাতাস গর্জ্জিয়া উঠিয়া হু-হু-হু-হু ছুটিয়া আসিতেছে!

 আপনাদের মনের আবেগে সুখেন্দু ও সরযূ এমনি বাহ্যজ্ঞানহীন হইয়াছিল যে, প্রকৃতির এই আকস্মিক পরিবর্ত্তন লক্ষ্য বা অনুভব করিবার অবকাশ তাহাদের মোটেই হয় নাই!

 সুখেন্দু তাড়াতাড়ি, “সরযু—ওঠ— ওঠ! ঝড় এল বলে! শীঘ্র চল!” সরযু উঠিয়া দাড়াইল।

 কিন্তু ততক্ষণে ঝড় আসিয়া পড়িয়াছে—তেমন ঝড় তারা বহুকাল

৪৫