পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

উপরে কল্লোলিনী তটিনীর শুভ্র-রেখা এবং টলটল বৃক্ষমালার রুদ্র নটনলীলা লইয়া রহিয়া রহিয়া মায়া-দৃশ্যের মত উদ্ভাসিত হইয়া উঠিতেছে! ক্ষুব্ধ ঝটিকা তখনও একটা বিশ্বব্যাপী হাহাকারের মত ফাটিয়া ফাটিয়া মরিতেছিল এবং তাহারই মূর্ত্তিমান্ গতির মত দূরে একখানা ‘মেলট্রেণ’ আপনার অগ্নিময় রক্তচক্ষু মেলিয়া কোনদিকে ভ্রূক্ষেপমাত্র না করিয়া, কাম্মুর্কমুক্ত শরবৎ হু-হু-বেগে ছুটিয়া চলিয়া গেল।

 সুখেন্দু কহিল, “এখন বাড়ী যাওয়ার কি হবে?”

 সরযূ কহিল, “তিনি কি ভাবচেন, জানিনা!”

 এই আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপ্লবে, তাহারা আপনাদের মানসিক বিপ্লব ভুলিয়া গিয়াছিল; এখন সুখেন্দুর মনে আবার সেই কথার উদয় হইল। সরযূর সেই রুক্ষ ও কঠিন ভাষা এবং ক্ষণপরেই তাহার সেই কাতর ক্ষমাপ্রার্থনা, এ সকলই তাহার মনে পড়িল। এখন অনেকটা প্রকৃতিস্থ হইয়া সে বেশ বুঝিতে পারিল যে, এই অসহায়া রমণীর প্রাণের ভিতরে কিরূপ বিপরীত দুই ভাবের ধারা পাশাপাশি বহিয়া যাইতেছে! একদিক্ হইতে তাহার বিবেক-বুদ্ধি উপায়ান্তর অভাবে তাহাকে যেমন কঠিন ও সাবধান করিয়া তুলিতেছে,— অন্যদিকে তেমনই তাহার হৃদয়ের দুর্ব্বল ও কোমল বৃত্তিগুলি তাহাকে অভিভূত করিয়া, তাহার মাথা নত করিয়া দিতে চাহিতেছে। সে সাধারণ স্ত্রীলোক নয় বলিয়াই, যেমনভাবে সমুদ্র-তরঙ্গের রুদ্র নৃত্য-রঙ্গের মুখে অচল শৈল সমান দাঁড়াইয়া থাকে, তেমন ভাবেই এখনও বৃত্তির এই প্রভুত্বকে অবহেলা করিয়া নিজে শক্ত হইয়া আছে। শক্ত না হইলেত’ তার আর কোন উপায় নাই! সুখেন্দু আপন মনে যতই এই কথাগুলি আলোচনা করিতে লাগিল, পাশের সেই

৪৭