পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

স্বল্পভাষিণী সঙ্গিনীটির উদ্দেশে তাহার প্রাণমন ততই ভক্তি ও সম্মানে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতে লাগিল।

 অকস্মাৎ অতি নিকটেই একটি বৃক্ষ-চূড়া বজ্রের ভৈরব হৃদয়-স্তম্ভন হুঙ্কারের সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল— এবং সেই তীব্র শিখার অসহ উত্তাপ যেন সরযূর সর্ব্বাঙ্গ দগ্ধ করিয়া দিয়া গেল; ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে অস্ফুট আর্ত্তনাদের সহিত সরযূ দুই চক্ষু মুদিয়া দুইহাতে প্রাণপণে সুখেন্দুর বাহুমূল আকড়িয়া ধরিল এবং তাহার মস্তক, সুখেন্দুর স্কন্ধের উপরে বলহীন হইয়া লুটাইয়া পড়িল।

 বজ্রপাতে সুখেন্দুর প্রাণও অভিভূত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু যখন বুঝিতে পারিল যে, সরযূ ভয় পাইয়াছে, তখন নিজের কথা সে ভুলিয়া গেল। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করিল, “সরযু, ভয় কর্‌চে?”

 কিন্তু সরযূ কোন কথা কহিতে পারিল না। বজ্ররোলে তাহার সর্ব্বশরীরে কেমন একটা মূঢ়তা আসিয়াছিল। সুখেন্দুর কণ্ঠস্বরে সে আরও জোরে তাহার বাহু চাপিয়া ধরিল। সেই গভীর আত্মসমর্পণের ভারে সুখেন্দুর মন কেমন একটা অজ্ঞাত পুলকে ভরিয়া গেল এবং স্কন্ধের উপরে সরযূর এক একটি তপ্তশ্বাস অনুভব করিয়া তাহার মনে হইল, যেন জীবনের উপর দিয়া বসন্তের এক একটি উত্তপ্ত সমীরোচ্ছ্বাস বহিয়া যাইতেছে!

 তখন ঝড় অনেকটা থামিয়া আসিয়াছে এবং বৃষ্টি পড়িতে সুরু হইয়াছে।

 সুখেন্দুর স্মরণ হইল, ছেলেবেলায় সে ও সরযূ যখন এক বিছানায় দুজনে শুইয়া থাকিত, তখন এমনি দুর্য্যোগময়ী রজনীতে, বজ্রনিনাদে সরযূ এমনি করিয়াই চমকিয়া সভয়ে তাহাকে জড়াইয়া ধরিত।

৪৮