পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতির শ্মশানে

 সুখেন্দু ধীরে ধীরে বলিল “সরযূ, আবার কি আমাদের ছেলেবেলা ফিরে এসেচে?”

 সরযূ নীরব। কিন্তু সুখেন্দু বুঝিতে পারিল, তাহার দেহ তখন থর্ থর্ করিয়া কাঁপিতেছে! বাতাসে সরযূর মাথার ‘এলমেল’ চুলগুলি সুখেন্দুর কণ্ঠে ও গণ্ডে উড়িয়া আসিয়া পড়িতে লাগিল।

 সুখেন্দু অস্ফুটকণ্ঠে বলিল, “বাল্যের স্মৃতি কি মধুর!”

 সরযূ এবারও কথা কহিল না! হঠাৎ সুখেন্দুর কণ্ঠে একফোঁটা জল পড়িল। প্রথমে সে ভাবিল, তাহা বৃষ্টির জল। কিন্তু তারা যেখানে বসিয়াছিল, সেখানেত’ বৃষ্টি পড়িতেছিল না! আর বৃষ্টির জল কি এত উষ্ণ? আবার, আর এক বিন্দু!

 সুখেন্দু সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিল, “সরযূ! তুমি কাঁদ্‌চ!”

 সরযূ এবার আস্তে আস্তে মাথা তুলিল। সুখেন্দুর বাহু ছাড়িয়া দিয়া কাতর, মৃদুস্বরে বলিল, “ভাই, আমাকে দয়া কর!”

 সুখেন্দু আরও বিস্মিত হইয়া কহিল, “কি বল্‌চ, সরযূ?”

 সরযূ তেমনি সকাতরে বলিল, “আমাকে দয়া কর ভাই, আমাকে দয়া কর! আমার সংসার উচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তুমি দয়া না কর্‌লে আমি মর্‌ব।”

 এইবার সুখেন্দু বুঝিল। তাহার মাথা বুকের উপরে ঝুঁকিয়া পড়িল।

 সরযুও অনেকক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল। বাহির হইতে তখন মাঝে মাঝে দম্কা বাতাস জলের ছাট্ মাখিয়া ভিতরে আসিয়া ঢুকিতেছিল।

 সরযূ হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলিল, “আমার অবস্থা একবার ভেবে

৪৯