পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

দেখ। আমি তোমাকে ইচ্ছে করে অবহেলা করি নি, আমি তোমাকে আগে ভালবাস্‌তুম—এখন ভয় করি। তোমার কোন দোষ নেই, তুমি বিদ্বান, তুমি চরিত্রবান্! কিন্তু আমার মনকে ত’ বিশ্বাস করা যায় না সুখেন্দু! আমি সামান্য স্ত্রীলোক, অন্যের পত্নী—আমি যদি সাবধান না হই ভাই, তাহলে ঈশ্বরের কাছে কি বলে জবাব দেব? তাই জোর ক’রে আমি তোমার ওপরে কঠোর হয়েচি! কিন্তু, তুমি আমার সাম্‌নে থাকলে আমি সমস্তকথা ভুলে যাই, আমি আপনাকে আর সাম্‌লে রাখতে পারি না! এই দেখ, একটু আগে আমার যে অবস্থা হয়েছিল, আমি যে-রকম নির্লজ্জের মত তোমার কাঁধে মাথা রেখে পড়েছিলুম,—তাতে—তাতে—” বলিতে বলিতে সরযূ আর কথা শেষ করিতে পারিল না—উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিয়া উঠিল—তাহার পর সেই অন্ধকারে দুই হাতে হঠাৎ সুখেন্দুর পা চাপিয়া ধরিয়া তেমনি কাঁদিতে কাঁদিতে অনুতপ্ত কণ্ঠে কহিল, “আমাকে দয়া কর—ওগো, আমাকে দয়া কর!”

 সুখেন্দু পা সরাইয়া লইতে পারিল না—কাঠ হইয়া স্তব্ধভাবে বসিয়া রহিল! তাহার দুই পদ সরযূর অশ্রুপাতে সিক্ত হইয়া গেল। তাহার মনে হইতে লাগিল, সেই অশ্রুর প্রতি বিন্দু যেন দ্রবীভূত অগ্নিপিণ্ডের একএকটি জ্বলন্ত ফোঁটা!

 সহসা দূরে মানুষের কণ্ঠস্বর শুনা গেল—যেন কাহারা গোলমাল করিতে করিতে আসিতেছে! `চমকিত হইয়া সুখেন্দু সেইদিকে প্রেতভয়গ্রস্তের মত চাহিয়া দেখিল—তাইত! গাছের পাতার ফাঁক দিয়া অনেক গুলা জ্বলন্ত আলো দেখা যাইতেছে!

 আলো ক্রমে নিকটে আসিল। পরিচিত কণ্ঠে একজন চীৎকার

৫০