পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

স্বরে কহিলেন, “অ্যাঁ! স্বামীর কাছে ভয়— অ্যাঁ! এযে অবাক্ কাণ্ড!”

 সরযূ তখন বুক বাঁধিয়া স্বামীর দৃষ্টিতে আপনার দৃষ্টি মিলাইয়া তাঁহার সামনে সোজা হইয়া বসিল। তারপর পরিষ্কার, সতেজ কণ্ঠে, এখানে সুখেন্দুর আগমন হইতে আরম্ভ করিয়া অদ্যকার ঘটনা পর্য্যন্ত সমস্ত বলিয়া গেল,—একটা সামান্য কথা ভুলিয়া গেল না, লজ্জাবশত কিছু রাখিয়া-ঢাকিয়া বলিল না।

 এই কথাগুলা বলিবার জন্য তাহার প্রাণ বুকের ভিতরে ব্যাকুল ও উন্মুখ হইরা ছিল—কে-যেন তার কাণে কাণে ক্রমাগত বলিতেছিল, ‘তোমার মন চঞ্চল হইয়াছে, তুমি স্বামীর সঙ্গে লুকাচুরি করিতেছ, তুমি অবিশ্বাসিনী!’ তাই যতক্ষণ সমস্ত ঘটনা, সমস্ত হৃদয়-বিপ্লব, আপনার সমস্ত চাঞ্চল্য ও গুপ্তকথা স্বামীর কাছে প্রকাশ করিয়া বলিয়া তাঁহার ক্ষমাভিক্ষা না চাহিবে, ততক্ষণ যে তাহার অশান্ত প্রাণ শান্ত হইবে না, এটা সে স্থির বুঝিয়াছিল।

 তাহার কথা শুনিতে শুনিতে বরেন্দ্রনাথ একবার মাথা চুল্‌কাইতে সুরু করেন, একবার কাঁচুমাচু মুখ করিয়া কড়িকাঠ বা দেওয়াল বা মেঝের দিকে চাহিয়া থাকেন, তাঁহার ভাবখানা দেখিলে মনে হয়,—সরযূর এই গোপনীয় আত্মকাহিনী শোনা,—তিনি যেন অত্যন্ত অন্যায় বলিয়া বোধ করিতেছেন।

 সরযূ তাহার কথা শেষ করিল। বরেন্দ্রনাথ স্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন।

 সরযূ কাতরভাবে বলিল, “বল, আমার সব দোষ মাপ কর্‌লে?”

৫৪