পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সুখেন্দু এমন দৃঢ়স্বরে কথাগুলি বলিল যে, বরেন্দ্রনাথ নেহাৎ হতাশ হইয়। ঘাড়নাড়া ভিন্ন আর কি করিবেন, খুঁজিয়া পাইলেন না। বরেন্দ্রনাথ যখন চলিয়া গেলেন, সুখেন্দু শুনিল, তিনি চিন্তিতভাবে আপনা-আপনি বলিতে বলিতে যাইতেছেন, “বটে, বটে, বটে! এরা সব দেবতা!”

 বরেন্দ্রনাথের এ কথাগুলির মানে কি? সুখেন্দু অনেকক্ষণ ভাবিল, কিছুই ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না।

* * * * *

 সেদিন সুখেন্দু লক্ষ্য করিল, সরযূর দৃষ্টি একটু লজ্জিত বটে, কিন্তু তাহার ভাব-ভঙ্গীতে আগেকার মত সঙ্কোচ বা জড়সড় ভাব আর নাই। সুখেন্দু ভাবিল, সে বিদায় হইতেছে, সেই আনন্দে সরযূর সঙ্কোচও দূর হইয়াছে। মনে-মনে সে একটু দুঃখিত ও মর্ম্মাহত হইল।

 কিন্তু, সুখেন্দু ভুল বুঝিয়াছে। সরযূর যত সঙ্কোচ, যত ভয় কাল রাত্রিতেই দূর হইয়াছে। পতির সুমুখে যখন সে মনের দরজা খুলিয়া দিতে পারিয়াছে, তখন হইতেই সে আবার একজন নূতন মানুষ।

 যাইবার সময়ে সে বাংলোর সামনের বাগানে সরযূকে দেখিতে পাইল। সরযূ তখন গোলাপের গাছ হইতে ফুল তুলিতেছিল।

 সুখেন্দু বলিল, “তোমার পথ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় হলাম সরযূ! তুমি সুখে থাক—আর আমি আস্‌ব না। কাল তোমার কথার উত্তর দেব বলেছিলাম, এই আমার উত্তর।”

 সকলের চেয়ে বড় গোলাপটি সরযূ এইমাত্র তুলিয়াছিল। সুখেন্দুর কথা শুনিবামাত্র তাহার হাত হইতে খসিয়া, ফুলটি নীচের নরম ঘাসের

৫৬