পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কপোতী

হঠাৎ বাহির হইতে দরজার উপরে আঘাত হইতে লাগিল— অতি মৃদু-মৃদু আঘাত। দরজা খুলিয়া দেখি,— আমার পায়রা! আমাকে দেখিয়াই তাদের একটি মাথা নাড়িয়া ঘুরিতে ঘুরিতে ‘বক্-বক্-বকম্’ করিয়া আমাকে বকিতে সুরু করিয়া দিল এবং অন্যটি ঘাড় কাঁপাইতে কাঁপাইতে আমার দিকে চাহিয়া রহিল। তাহারা যেন বলিতে চায়, “বেড়ে লোক ত’ হে! আমরা এখানে না খেয়ে উপোস ক’রে মর্‌ছি, আর তুমি কিনা দিব্যি নিশ্চিন্ত হ’য়ে ব’সে আছ! বেশ মানুষ যা হোক!”

 সেইদিন হইতে আমি তাদের ঠিক নিয়মমত খাবার দিতাম।

 তারা কিন্তু আমার চেয়ে আমার স্ত্রীকে বেশী ভালবাসিত। বিকালে, হাতে যখন কোন কাজ থাকিত না— তাদের সঙ্গে আমার স্ত্রী খেলা করিত। সে হাততালি দিয়া তাহাদিগকে ডাকিত,— করতালির তালে তালে আহত কঙ্কণ-বলয় রিণি-রিণি কাঁদিয়া উঠিত এবং সেইসঙ্গে পায়রা দুটি স্ত্রীর কাঁধে বা বাহুর উপরে আসিয়া বসিত। প্রিয়া আস্তে আস্তে আপনার নরম আঙ্গুলের গোলাপী নখ দিয়া তাদের ছোট ছোট মাথা চুলকাইয়া দিত, তাদের কোমল বুকে, কোমল পিঠে আদরমাথা চুম দিত,, আর সেই পুষ্পপেলব অধরের মায়াস্পর্শে কপোতদুটির অবশ দেহ আরামে এলাইয়া পড়িত,— তাদের রাঙ্গা-রাঙ্গা চোখদুটি আলসে ঢুলিয়া পড়িত।

 জানালায় মুখ বাড়াইয়া আমি বলিতাম, “প্রিয়ে, আমার পাওনা অন্যকে দিও না,—তোমার চুম্বনের মালিক আমি!”

 চকিত গ্রীবা-ভঙ্গীতে আমার দিকে ফিরিয়া সে একটি লজ্জাললিত মধুর কটাক্ষ করিত।

৫৯