একমনে কি শুনিতেছিল। আমাকে জাগিতে দেখিয়া সে, মৃদু কাতর স্বরে বলিল, “আহা, শোন!”
“কি, বৃষ্টি পড়্ছে—?”
“না। আর কিছু শুন্তে পাচ্ছ না?” .
আমি কাণ পাতিয়া শুনিতে লাগিলাম। তাইত! বৃষ্টি ও বাতাসের শব্দ মাঝে মাঝে থামিয়া পড়িতেছে, আর সেইসঙ্গে কোন আর্ত্ত কপোতের অতি করুণ, অতি অস্ফুট ক্রন্দন রহিয়া রহিয়া ফুটিয়া উঠিতেছে। বুঝিলাম, বরষা-রাতে, বজ্রের এই কঠোর অট্টহাস্যে, বৃষ্টির এই হিম-শীতল ঝাপটায়, ঝড়ের এই বিষম দাপটে, নীড়ের ভিতরে দোসর-হারা হইয়া বিনিদ্র কপোতী আপন প্রিয়ের বিরহে কাঁদিয়া-কাঁদিয়া মরিতেছে! আজ আর প্রিয়ের প্রেমতপ্ত পক্ষপুট-নাই, আজ আর তাহার ভয়কম্পিত তনুকে ঢাকিয়া রাখিবার কোন আবরণ নাই,—আজ সে একাকী! আহা, বড় একাকী! কেন জানি না, তাহার শোকে আমারও প্রাণের ভিতরে কেমন একটা হাহাকার জাগিয়া উঠিতে লাগিল। আস্তে আস্তে জানালা খুলিয়া দিলাম। অমনি বৃষ্টির সঙ্গে ভিজে ঝোড়ো হাওয়া হু-হু হু-হু করিয়া ঘরের ভিতর ঢুকিয়া পড়িল। কপোতীর বাসার দিকে চাহিলাম। কিছু দেখিতে পাইলাম না—চারিদিকে রজনী আপনার আঁধার-বেণী এলাইয়া দিয়াছে। সে অন্ধকারের ভিতর হইতে ঝড়ের দীর্ঘশ্বাসের সহিত কেবল কপোতীর বুকভাঙ্গা কান্না অস্পষ্টভাবে শুনিতে পাইলাম। আমার মনে হইল, সে কান্না যেন পাখীর নয়— মানুষের!