পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৷৵৹

 “সোণার চুড়ী”তে দেখান হইয়াছে যে, জীবনের ক্ষুদ্র দুর্ব্বলতা সময়ে সময়ে কতটা ভয়ানক হইয়া উঠিতে পারে। দরজা-জানালা বন্ধ করিয়া অন্ধকার ঘরের ভিতরে পূরিয়া রাখিলে অসতীকেও সতী বলা যায়; কিন্তু, পৃথিবীর শত পাপের ভিতরে, প্রলোভনের ভিতরে যাঁহার সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা হইয়া যায়, পরিণামে যে রমণী মন দমন করিয়া বিজয়িনী হন, আসল সতীত্বগৌরবের অধিকারিণী তিনিই। এই গল্পের নায়িকা সুযোগ পাইয়াও সুযোগকে অবহেলা করিলেন, তাঁহার চরিত্রে যে অন্যায় ও ক্ষণিক দুর্ব্বলতা দেখা যায়, হিন্দুমহিলার কল্পিত আদর্শের পক্ষে তাহা অস্বাভাবিক হইতে পারে, কিন্তু রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে তাহা খুবই স্বাভাবিক। লেখক এখানে আদর্শচরিত্র গড়িতেছেন না, তিনি জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতির সহিত সাংসারিক মানুষের চরিত্র-চিত্রণের চেষ্টা করিয়াছেন। পরিণামের সতীত্বপরীক্ষায় সফলতালাভের কথা ছাড়িয়া দিলেও, সূক্ষ্মদর্শী পাঠকেরা দেখিবেন যে, এই গল্পের প্রধান চরিত্রের ক্ষণিক মানসিক দুর্ব্বলতাকেও লেখক স্পষ্টভাবে অন্যায় বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন। পাছে কেহ সন্দেহ, করেন যে, লেখক দুর্নীতিপ্রচার করিয়াছেন, সেইজন্য এতকথা বলিতে হইল। যাহারা এই কৈফিয়তেও তুষ্ট না হইয়া, লেখকের উদ্দেশ্য না বুঝিয়া কোলাহল করিবেন, তাঁহারা এ গল্প না পড়িলেই বাধিত হইব। যাহা সত্য, যাহা vulgar নহে, যাহার উদ্দেশ্য সৎ, তাহাকে দুর্নীতি বলা যায় না। এরূপ একটি সত্য, শত শত কল্পিত আদর্শ অপেক্ষা অনেক উচ্চ, অনেক বড়। মুখে আমরা যত বড় বড় কথাই বলি না কেন, আমাদের মন ইহাকে সত্য বলিয়া জানে, সত্য বলিয়া গ্রহণ করে। একথা যাঁহারা অস্বীকার করিবেন, তাঁহারাই প্রকৃত দুর্নীতির প্রচারক এবং সমাজের শত্রু।

 “সঙ্কল্প” নামক মাসিকপত্রে যখন “কপোতী” নামে গল্পটি বাহির হয়,