পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

তাহার যশ চারিদিকে ব্যাপ্ত হইতে দেখিয়া তাহার সহযোগী চিত্রকরেরা যথেষ্ট ঈর্ষান্বিত হইয়া উঠিয়াছিল—তন্মধ্যে যোগেশবাবুই প্রধান। তাহার ভিতরে যে প্রতিভা আছে, এ-কথাটা যোগেশবাবু মনে-মনে বুঝিলেও, মুখে কিছুতেই মানিতে চাহিতেন না।

 অল্পদিনেই রণেন্দ্রের এতটা নাম হইবার কারণও ছিল। ছবি-আঁকাকে সে একটা সখ বা পয়সা-রোজগারের উপায় বলিয়া মনে করিত না। মৃণ্ময়ী প্রতিমার ভিতরে সাধক যেমন চিন্ময়ী শক্তিকে শরীরিণী দেখে, কল্পনার মায়ালোকে সেও তেমনি আপনার জীবন-রূপিণী মানসীর লীলায়িত গতি নিরীক্ষণ করিত। সে যখন তুলি ধরিয়া ছবি আঁকিতে বসিত, চারিদিকের এই বৃহৎ পৃথিবীর সমস্ত স্মৃতি তখন তাহার মনঃপট হইতে একেবারে পুঁছিয়া যাইত—এমন কি, নিজের অস্তিত্বের কথাও তখন তাহার স্মরণ থাকিত কিনা সন্দেহ! প্রকৃত কথা বলিতে গেলে, তখন সে পাগলের মত হইয়া যাইত এবং চিত্রে প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য সে-সময়ে নিজের প্রাণকেও বুঝি সে বলি দিতে পরিত! একনিষ্ঠ সাধক বলিয়াই এত শীঘ্র সে যশের মাল্য পাইয়াছে।

 চরিত্রেও সে, ভিতরে বাহিরে সরল ছিল। এই সরলতা এবং আত্মশক্তির উপরে একান্ত বিশ্বাস থাকাতে, রণেন্দ্র রাখিয়া-ঢাকিয়া কিছু বলিতে পারিত না। আত্মশক্তিতে বিশ্বাস থাকা খুব ভাল কথা। নহিলে জগতে কেহ মানুষ হইতে পারে না। কিন্তু এ বিশ্বাস মনের ভিতরে চাপা রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। বাহিরে ইহা বাহির হইলে পৃথিবীর কঠিন জনসমাজ অসহিষ্ণু হইয়া উঠে।

 এখানে ঠিক তাহাই হইয়াছিল। রণেন্দ্র সরলপ্রাণে যাহা বলিত,

৭০