পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যশের মূল্য

লোকে তাহা গর্ব্ব বলিয়া ধরিয়া লইত। এবং সুমুখে কিছু না বলিলেও আড়ালে তাই লইয়া কানাকানি করিত।

 সকলে সর্ব্বদাই রণেন্দ্রকে আনমনা দেখিত। কাহারও কথা সে কাণ পাতিয়া শুনিত না— কেহ জিজ্ঞাসা করিত এক, উত্তর পাইত আর—সর্ব্বদাই সে কেমন-যেন স্বপ্নাচ্ছন্ন হইয়া থাকিত এবং কথাবার্তাতেও তেমন গোছাল ছিল না। সে বিবাহ করিয়াছে—একটি ছেলেও হইয়াছে,—পত্নীও সুন্দরী, কিন্তু সংসার বা কোন কিছুতেই তাহার বিশেষ একটা টান্‌ ছিল না—অথচ তাহার হৃদয় স্নেহ-প্রেমে পরিপূর্ণ! তাহার কার্য্যে ও বাক্যে একমাত্র কামনাই প্রকাশ পাইত—তাহা চিত্র-সাধনা করিয়া অমর হওয়া! এইজন্য বন্ধুজনেরা ভাবিত, সে পাগল! কোনও ফাঁপা জিনিষকে জোর করিয়া জলের ভিতরে চুবাইয়া দিলেও যেমন ডুবাইয়া দেওয়া যায় না—তাহা উপরে ভাসিয়া উঠিবেই উঠিবে—সংসারে ভাবপ্রবণ লোকগুলিও ঠিক্ তেমনি। সংসারের গোলমালে কিছুতেই তারা ডুবিয়া থাকিতে চায় না—তাহাদের ব্যগ্র প্রাণ সংসারের উপরকার স্বাধীনতার দিকে সর্ব্বদাই উঠিয়া যাইতে চাহে।

 রণেন্দ্র ভাবিতে ভাবিতে আপনার বাড়ীর সামনে আসিয়া দাঁড়াইল। দেখিল, দরজার কাছে তাহার চারিবছরের খোকা, মুখের ভিতরে আঙ্গুল পূরিয়া দিয়া গম্ভীরমুখে অত্যন্ত চিন্তিতভাবে দাড়াইয়া আছে!

 পিতাকে দেখিয়া খোকা ছুটিয়া আসিল। দুইহাতে রণেন্দ্রকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, “বাবা, বাবা!”

 “কিরে খোকা?”

৭১