খোকা বাপের হাত ধরিয়া টানিতে টানিতে বলিল, “বাবা, দেখ্বে এস! একটা ব্যাঙ্কে ইট্ মেরেচি, তার পা খোঁড়া হয়ে গেছে!”
রণেন্দ্র ছেলেকে কোলে করিয়া বলিল, “তা আমি কি কর্ব রে দুষ্ট?”
খোকা বলিল, “ব্যাঙ্ যে বাড়ী যেতে পার্চে না! তার পা খোঁড়া, কি করে চল্বে বাবা? চল, ব্যাঙ্কে কোলে করে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আস্বে চল!”
ব্যাঙের বাড়ীর ঠিকানা রণেন্দ্রের একেবারেই জানা ছিল না। সুতরাং সে হাসিতে হাসিতে থোকাকে লইয়া নিজের বাড়ীর ভিতরেই ঢুকিল।
এবারকার প্রদর্শনীতে কিরূপ চিত্র দিবে, রণেন্দ্র বসিয়া বসিয়া তাহাই ভাবিতে লাগিল।
ঘরের দেওয়ালে তাহার হাতের আঁকা সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ নানারূপ চিত্র রহিয়াছে। কোনখানি প্রকৃতি-চিত্র এবং কোনখানি-বা মুর্ত্তি-চিত্র। কোথাও সমুজ্জ্বল সোণার মত সরিষা-ক্ষেতের উপর দিয়া শঙ্খশুভ্র বলাকাদল দিগন্তে দৃষ্টমান সবুজ বনভূমির পানে উড়িয়া যাইতেছে, কোথাও ছায়ালোক-বিচিত্র বিপুল-আয়ত ধরণীর নতোন্নত শ্যামল দেহের উপর দিয়া, অসংখ্য শিরা-উপশিরার মত নদনদীগুলি একিয়া-বেঁকিয়া ক্রমাতিসূক্ষ্ম হইয়া দিক্-রেখায় মিলাইয়া গিয়াছে, কোথাও ধূমের মত ধূসর অভ্রভেদী পর্ব্বতমালা প্রখর তপন-করে আপনি দগ্ধ হইয়াও, শত শত আতপতপ্তের জন্য পদতলে স্নিগ্ধ-ছায়া রচনা করিয়া অটল-ভাবে দাঁড়াইয়া