পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যশের মূল্য

আছে। এমনি নানা দৃশ্য। আর একদিকে নানা আকারের নর-নারীর মূর্ত্তি—হৃদয়ের ভাব তাহাদের সকলেরই মুখে-চোখে ফুটিয়া উঠিয়াছে। তাহাদের কেহ হাস্যে উজ্জ্বল, কেহ লাস্যে চঞ্চল, কেহ ক্রোধে বিকৃতাস্য, কেহ চিন্তায় কুঞ্চিত-ললাট, কেহ বিরহে বিক্ষুব্ধ, কেহ মিলনে নন্দিত!

 ঘরের উত্তর দিকে জানালার কাছে একটি ‘চিত্রধরে’র উপরে একখানি অসমাপ্ত ছবি রহিয়াছে। তাহাতে বর্ণমঞ্জুল ল তালীকুঞ্জের চির-মৌন ছায়ার আশ্রয়ে এক মধুরযৌবনা ললনা সরসীর কৃষ্ণনীরে স্থিরবিদ্যুৎপ্রভাবৎ শোভা পাইতেছে। যুবতীর মুখে চিত্রকরের তুলিকা, আনন্দ ও জীবনের আভাস প্রস্ফুট করিয়াছে, কিন্তু তাহার গৌর ও ক্ষীণ কটিতট বেড়িয়া রূপ-পিপাসী চপল জলের মোহন নটন এখনও ফুটিয়া উঠে নাই!

 এই সকল ছবির সঙ্গে চিত্রকরের কতদিনের আশা ও হতাশা মিশান আছে! আজ কিন্তু রণেন্দ্রের চিত্তকে, তাহার এত যত্নের ও শ্রমের চিত্রগুলি আগেকার মত তেমন আত্মীয়ের ন্যায় আকর্ষণ করিতে পারিল না! তাহার মনে হইতে লাগিল এতদিন সে সুধু ছেলেখেলা করিয়াছে, কেবল কতকগুলা রঙ্গের উপরে রঙ্গ চাপাইয়াছে! এতদিন ধরিয়া সে যতটুকু শক্তিসঞ্চয় করিয়াছে, আজ তার প্রাণ কেবল ততটুকু লইয়া কিছুতেই প্রীত হইতে পারিল না— কারণ, তাহার মানস-কল্পনা আজ উচ্চে—উচ্চে —আরও উচ্চে উধাও হইয়া চাতকের মুক্ত উড়িয়া যাইতে চাহিতেছে! বরষার সজল ঋতু একবার যদি আসে, তবে গিরিনদী কি আর তখন আপন পূর্ব্ব-সংকীর্ণতার মাঝে বাঁধা থাকিতে পারে? সে তখন উদ্দাম বেগে অসীমতার দিকে ছুটিয়া চলে, একবারও ফিরিয়া তাকায় না,

৭৩