পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

আপনার পূর্ব্বাবস্থা লইয়া কিছুতেই তুষ্ট হইতে পারে না। রণেন্দ্রের মানস-নদেও আজ বিপুল আয়োজনে ভাবের বরষা নামিয়াছে।

 রণেন্দ্র স্থির করিল, এবারে সে এমন ছবি আঁকিবে, যাহার সঙ্গে তাহার নাম চিরদিনের জন্য অমর হইয়া থাকিবে! তাহার মানসী যে শিশুর খেলার পুতলি নয়, এ-কথা সকলকে সে ভাল করিয়াই বুঝাইয়া দিবে!

 টেবিলের উপরে মাথা রাখিয়া রণেন্দ্র একমনে চিন্তা করিতে লাগিল। সে কি আঁকিবে? কোন্ বিষয়? হৃদয়ের কোন্ তন্ত্রীতে আঘাত করিলে সাধারণের অনুভূতি জাগিয়া উঠে—অথচ সৌন্দর্য্য-লক্ষ্মীর মর্য্যাদা অক্ষত থাকে? অঙ্কন-যোগ্য শত শত বিষয় তাহার চোখের সামনে দিয়া বায়স্কোপের ছবির মত পরে পরে চলিয়া গেল—কিন্তু কোনটিতেই তাহার প্রাণ আজ সাড়া দিয়া উঠিল না। ভাবিতে ভাবিতে আসন্ন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘরের ভিতরে ক্রমেই ঘনাইয়া আসিল—কিন্তু, চিত্রবস্তু স্থির হইল না! কুললক্ষ্মীদের মধুর ফুৎকারে পল্লীতে পল্লীতে আকুল শঙ্খ সুদূর সাগরের স্মৃতির গান গায়িয়া উঠিল এবং সেই গভীর নির্ঘোষে সচকিত হইয়া রণেন্দ্র উঠিয়া দাঁড়াইল। তাহার পর সেই অন্ধকারে সে ঘরের ভিতরে চিন্তাক্লিষ্ট হৃদয়ে পাগলের মত ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল—কিন্তু বৃথা! বেদনায় ও হতাশায় রণেন্দ্রের বুক যেন ভাঙ্গিয়া যাইতে চাহিল—তবু ত গোপন মানসী মুর্ত্তি ধরিল না!

 অনেক রাত। অমাবস্যার আঁধারে আকাশকে যেন পরলোকের একটা গভীর রহস্যের ন্যায় বোধ হইতেছিল—রণেন্দ্র উদ্‌ভ্রান্তের মত সেইদিকে তাকাইয়া রহিল।

৭৪