ঙ
বিকারের রোগীর রাত যেমন তাহার অগোচরে কাটিয়া যায়, সে রাত্রিও তেমনি কখন যে পোহাইয়া গেল, রণেন্দ্র তাহার কিছুই টের্ পাইল না। সে এ-কয়দিন চিত্রশালাতেই শয়ন করিয়াছে।
মুখে-চোখে অনিদ্রার চিহ্ন লইয়া রণেন্দ্র ঘরের বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইতে না দাঁড়াইতে তাহার স্ত্রী বিবর্ণমুখে ছুটিয়া আসিল। তাড়াতাড়ি তাহার হাত ধরিয়া বলিল, “ওগো, খোকার কি হয়েছে, দেখবে এস!”
রণেন্দ্র বলিল, “কি হয়েচে?”
লীলা হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলিল, “বোধ হয় — বোধ হয়— কলেরা! অমন করে দাঁড়িয়ে থেকো না-বাছা একেবারে নেতিয়ে পড়েচে।”
অত্যন্ত বিপন্নভাবে রণেন্দ্র আপনার শয়নকক্ষে প্রবেশ করিল।
খোকা তাহার বিছানার সঙ্গে মিশিয়া নিস্তেজ হইয়! পড়িয়া আছে এবং শয্যার সর্ব্বত্র একটা ভীষণ রোগের চিহ্ন জাজ্বল্যমান। অমন সোণার মত দেহের রঙ, দুদণ্ডেই যেন একেবারে ‘পাঙাস্পানা’ হইয়া গিয়াছে। হঠাৎ দেখিলে মনে হয়, খোকা বাঁচিয়া নাই! কেবল তাহার বুকের কাছটি ধুক্-ধুক্ করিতেছিল, তাহাতেই অতি ক্ষীণভাবে জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পাইতেছিল।
খোকার মাথার উপরে ঝুঁকিয়া পড়িয়া রণেন্দ্র স্তম্ভিতভাবে দাঁড়াইয়া রহিল।
লীলা বলিল, “ওগো, অমন করে দাঁড়িয়ে থেকো না—যাও, যাও, শীগগীর্ ডাক্তার ডেকে আন।”