পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যশের মূল্য

 দুইহাতের ভিতরে মুখ গুঁজিয়া সে কি ভাবিতে লাগিল। তাহার ভাব দেখিলে মনে হয়, সে-যেন ভীষণ একটা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করিতেছে! চারিদিক্ অত্যন্ত নিস্তব্ধ। দেওয়ালে সুধু ব্রাকেটের উপর ঘড়ীটা অশ্রান্তভাবে টিক্-টিক্-টিক্ করিতেছিল এবং রণেন্দ্রের বুকের ভিতর হইতে তাহার হৃৎপিণ্ডটাও যেন উত্তর দিয়া তালে তালে কহিতেছিল,—দুপ—দুপ্,—দুপ্! যেন তাহার ভয়ানক সংকল্পের কথা জানিতে পারিয়া ঘড়ী আর হৃৎপিণ্ড পরস্পরের সহিত কি কানাকানি করিতেছিল! হঠাৎ রণেন্দ্র উঠিয়া দাঁড়াইল এবং হিপ্‌নটিজিমে অভিভূত লোক আপনার অজ্ঞাতসারে যেমনভাবে কথা কহে, তেমনিভাবে কহিল, “কি করি? এমন আদর্শ আর পাব না—কিন্তু, কিন্তু—সে যে আমার ছেলে!” বলিতে বলিতে থামিয়া গিয়া অত্যন্ত বিবর্ণ-মুখে আবার সে বসিয়া পড়িল এবং স্তব্ধভাবে আবার ভাবিতে লাগিল।

 হঠাৎ বাড়ীর ভিতর হইতে তীক্ষ্ণতীরের মত একটা আর্ত্তনাদ তাহার বাণে আসিয়া বাজিল।

 “ওরে খোকা - কোথা গেলি রে!”

 ছিলা ছিঁড়িয়া গেলে, ধনুক যেমন সহসা সিধা হইয়া যায়, চিন্তানত রণেন্দ্র ঠিক্ তেমনিভাবে সোজা হইয়া দাঁড়াইল। তাহার মুখে রক্তের লেশমাত্র নাই! একবার কাণ পাতিয়া সেই আর্ত্তনাদ শুনিল। বুঝিল, খোকা নাই।

 আপনমনে বিড়-বিড়, করিয়া বলিল, “ভগবান্! ভগবান্! তুমি সাক্ষী—আমার কোন দোষ নেই!”

 তাহার পর আপনার মাথার চুলগুলা ডানহাতে মুঠা করিয়া ধরিয়া,

৭৯