রণেন্দ্র আবার কি ভাবিতে লাগিল। একটু পরেই, অকস্মাৎ তন্দ্রা ছুটিয়া গেলে যেমন হয়, তেমনি চমকিয়া উঠিয়া তাড়াতাড়ি এককোণে গিয়া টেবিলের উপর হইতে চিত্রপট, তুলি ও রং লইয়া, সে ঘরের ভিতর হইতে ছুটিয়া বাহির হইল।
শয়ন-কক্ষের সুমুখে, ‘একটা জানালার কাছে আসিয়া রণেন্দ্র থমকিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল। কিছু শোনা যায় কি? না, সব চুপচাপ। সেই জানালা দিয়া ঘরের ভিতরটা দেখা যাইতেছিল। উঁকি মারিয়া ভয়ে-ভয়ে রণেন্দ্র যাহা দেখিল, তাতে তার সর্ব্বদেহে কাঁটা দিয়া উঠিল। সমস্ত বিছানাট। ওলট্-পালট্ হইয়া গিয়াছে— পুত্রহারা জননী নিশ্চয় সেখানে পড়িয়া ছট্ফট্ করিয়া কাঁদিয়াছে!
আর—ওখানে, ওকি! ঘরের মেঝেতে লুটাইতে লুটাইতে ছেলের মৃতদেহ দুইহাতে বুকে আঁকড়িয়া লীলা, এলোচুলে, বিস্ফারিত-নেত্রে খোকার অসাড় ওঠে, প্রাণপণে চুম্বন করিতেছে!
রণেন্দ্রের দুইচোখে কে-যেন দুটো শলা বিঁধিয়া দিল! অধরে ওষ্ঠ চাপিয়া, অনেক কষ্টে আপনাকে সামলিয়া রণেন্দ্র, পটের উপরে তুলির প্রথম রেখা টানিল! তাহার সুমুখে—ঘরের ভিতরে সেই ভয়ানক আদর্শ! জগতের আর কোন চিত্রকর বোধ হয়, এমন আদর্শের সামনে তুলি ধরেন নাই।
বাহিরে, রণেন্দ্রের দেহে কোন চাঞ্চল্য ছিল না। কিন্তু তার মনের ভিতরটা কি করিতেছিল, কে তা বুঝিবে? সে যে পিতা!
রণেন্দ্র তাড়াতাড়ি ছবি আঁকিতে লাগিল,—জীবনে এত তাড়াতাড়ি সে আর কখনও আঁকে নাই! তার আঙ্গুলে কোন অজ্ঞাত শক্তি আজ