যেন কি মন্ত্র পড়িয়া দিয়াছিল! আঁকিতে আঁকিতে শুনিল, “খোকা, ও খোকা! কথা ক’ বাপ্, কথা ক’—একটিবার চোখ চা যাদু!”
রণেন্দ্র অস্ফুটম্বরে কহিল, “ওঃ! আর যে পারি না!” তাহার হাত হইতে খসিয়া তুলি মাটিতে পড়িয়া গেল।
কিন্তু তখনি তুলিটা তুলিয়া লইয়া সে আবার আঁকিতে আরম্ভ করিল। মাঝে মাঝে লীলার ক্রন্দন-স্বর তাহার শ্রবণ দিয়া মর্ম্মে পশিয়া ধমনীর রক্তপ্রবাহ যেন বন্ধ করিয়া দেয়, তাহার হস্তকে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মত অসাড় করিয়া তুলিকার গতি থামাইয়া দেয়—কিন্তু অনতিবিলম্বেই আবার সে আত্মসংবরণ করে। এমনি করিয়া মিনিটের পর মিনিট কাটিতে লাগিল।
সদর দরজায় ততক্ষণে ভিতরে আসিবার জন্য চাকর-বামুনেরা গোলমাল সুরু করিয়াছে। কিন্তু, রণেন্দ্র তখন জগতের আর সব শব্দের দিকে যেন কালা হইয়াছিল—সে কিছুই শুনিতে পাইল না! সে তখন একবার ঘরের ভিতরে, আর একবার পটের উপরে চাহিতেছিল; একবার রঙে তুলি ডুবাইতেছিল, আর একবার পটে তুলি বুলাইতেছিল—সে যে পিতা এবং ঘরের ভিতরে পত্নীর বুকে ও যে তার মৃতপুত্র—এ স্মৃতিটুকুও বুঝি সে, ক্রমে ক্রমে, ধীরে ধীরে ভুলিয়া যাইতেছিল!
হঠাৎ লীলা তাহাকে দেখিতে পাইল। ছুটিয়া, জানালার কাছে আসিয়া সে সক্রন্দনে বলিয়া উঠিল, “ওগো, ডাক্তার ডেকেচ গো! একবার এসে দেখে যাক্ যাদু আমার বেঁচে আছে কিনা—অ্যাঁ-অ্যাঁ-ওকি! ছবি আঁক্চ, ছবি আঁক্চ!”
চকিতে ফিরিয়া দাঁড়াইয়া রণেন্দ্র পাংশুমুখে লীলার দিকে চাহিল।
৬