পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যশের মূল্য

 কয়েকদিন কাটিয়া গিয়াছে। শিল্প-প্রদর্শনী খুলিয়াছে।

 প্রদর্শনীতে দেখিবার জিনিষ অনেক—কিন্তু দর্শকেরা বিশেষ করিয়া একখানি ছবির দিকে ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে। ছবিখানি ছোট এবং এখনও অসমাপ্ত। ছবির নাম, “শেষ চুম্বন।”—ছেলের মৃতদেহ বুকে করিয়া, জননী আপনার হৃদয়-দুলালের চাঁদমুখে জন্মের শোধ শেষবার চুম্বন-দান করিতেছেন,—ইহাই চিত্রের বিষয়।

 শোকাতুরা জননীর মুখে, চোখে ও দেহে, চিত্রকরের তুলিকা এমন একটি করুণভাব ফুটাইয়া তুলিয়াছে যে, যিনিই দেখিতেছেন, তিনিই কাঁদিয়া ফেলিতেছেন। চিত্রের ভিতরে যে এতটা করুণরস থাকিতে পারে, একথা আগে কেহ কল্পনা করিতেও পারে নাই। একজন বলিলেন,

 ভিড়ের ভিতরে কয়েকজন চিত্রকরও ছিলেন। “দেখুন যোগেশবাবু! আপনি কি বলেন?”

 যোগেশবাবু তখন অবাক্ হইয়া ছবির দিকে চাহিয়াছিলেন। হঠাৎ প্রশ্ন শুনিয়া, একচোখ মুদিয়া বলিলেন, “আশ্চর্য্য! আগে জান্‌লে রণেন্দ্রকে আমার গুরু কর্‌তুম।”

 দর্শকদের ভিতরে ধন্য ধন্য রব পড়িয়া গেল। কিন্তু কেহ জানিল না, এ যশের মূল্য কি? শুনিলেও, হয়ত’ কেহ বিশ্বাস করিত না। শিল্পী যে সোণার মত আপনি পুড়িয়া খাক্ হইয়া, শিল্প-লক্ষ্মীর কনক-চরণে নূতন ভূষণ দিয়াছে, এ খোঁজ কেহ পাইল না।

৮৩