পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 কুবের অপ্রতিভ হইয়া কহিত, “হ্যাঁ— তা—না—কি জান, তাই বল্‌চি।”

 “আমাকে বল্লে কি হবে?”

 কি যে হবে, সেটা কুবেরও জানিত না। তবে, একটা কিছু হওয়া চাই, এটুকু সে বুঝিত।

 সরলা ভাতের হাঁড়ীতে সরাখানা চাপা দিয়া ‘ন্যাতা’য় হাত পুঁছিয়া বলিত, “বেটাছেলে হয়ে, লেখাপড়া শিখে এমন করে বসে থাক্‌তে লজ্জা করে না তোমার! এই যদি মনে ছিল, তবে বিয়ে ক’রেছিলে কেন?”

 কুবের আর সেখানে তিষ্ঠিতে পারিত না, সরলার কথায় বড় ‘ঝাঁঝ’! সে যে ইচ্ছা করিয়া বসিয়া নাই, এই সহজ সত্যটা সরলা কিছুতেই বুঝিত না। একটা ১৫ টাকা মাহিনারও চাকুরি পাইবার জন্য, সে কোথায় না গিয়াছে! কতনা সন্ধান, কতনা হাঁটাহাটি, কতনা খোসামুদি! কিন্তু চাকুরি মিলে না,—চাকুরি মিলে না! হায় চাকুরি!

 পাওনাদারের তাগাদা, বাড়ীওয়ালার রক্তচক্ষু, অথচ হাতে একটি পয়সা নাই—এরূপ অবস্থায় বাহির হইতে ক্রমাগত ধাক্ক। পাইলে, মানুষের মন সহজেই একটা অবলম্বন খোঁজে, একটু হাঁফ্‌ ছাড়িবার জায়গা চায়, দুটি আশার কথা শুনিতে ইচ্ছা করে। যার সুগৃহিণী থাকে, সে আশ্রয় পায়। তখন প্রিয়ার মৃদুবাণী, উৎসাহভরা প্রেমপেলব চোখদুটি, সমবেদনামাখা সেবানিপুণ কোমল করের অমৃতস্পর্শ,—জীবনযুদ্ধে নমিতভগ্ন হতভাগার নিখিল ক্লান্তি অপনোদন করে। কিন্তু কুবের সুগৃহিণী পায় নাই। এর চেয়ে পোড়াকপালের কথা দুঃখীর ঘরে আর কি আছে!

৮৬