পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

 আজ সকালে, কোন ঔষধের দোকানে কর্ম্মখালির একটি বিজ্ঞাপন পড়িয়া, কাক-চিল্‌ ডাকিবার আগেই, সে বিজ্ঞাপন-নির্দ্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়া হাজির হইয়াছিল।

 বাহির হইতে ডাকিবামাত্র, জনৈক একচক্ষু মূর্ত্তি হুঁকা-হাতে জানালার ধারে আসিয়া দাঁড়াইল। খানিকক্ষণ কুবেরকে ‘আষ্টেপিষ্টে’ নিরীক্ষণ করিয়া সে কহিল, “কি চান মশায়?”

 “এখানে কাজ খালি আছে শুনে এসেছি।”

 লোকটা কলিকায় ফুঁ দিতে দিতে তার একমাত্র চোখ বুজিয়া কি-যেন ভাবিতে লাগিল; তারপর সহসা বলিয়া উঠিল, “ও হো-হো! বুঝিচি! তুমি বুঝি আমার বিজ্ঞাপন পড়ে এসেচ? আরে নিরেট, এটাও বোঝনি, যে কর্ম্মর্খালি আর লোক চাই বলে বিজ্ঞাপন না দিলে, কেউ সেটা পড়্‌বে না! বলি, ওষুধ-টষুধ কিন্‌বে কি,—খুব তাজা ওষুধ, ‘সর্ব্ববিধ জ্বর-হর’! কেনো ত’ ঘরের ভেতরে এস, নৈলে পথ দেখ বাবা, পথ দেখ।” বলিয়া, ক্ষণিকের জন্য সে একচক্ষুতে কুবেরের মুখের দিকে চাহিয়া হঠাৎ এমনি অট্টহাস্য করিয়া উঠিল যে, রাস্তার ধারে কুণ্ডলী পাকাইয়া একটা কুকুর শুইয়াছিল, সে কাণখাড়া করিয়া উঠিয়া, ল্যাজ গুটাইয়া একি হইল ভাবিল চোঁচা দৌড় দিল।

 ম্রিয়মাণ হইয়া কুবের বাসার দিকে ফিরিল। বাসায় পৌঁছিয়া দেখিল, ছেলে আর মেয়ে দরজার চৌকাঠে বসিয়া কাঁদিতেছে।

 কুবের রুক্ষস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “হয়েচে কি, কাঁদছিস্ বড় যে!”

 মেয়ে বলিল, “মা মেরেচে, দুধ খেতে দেয় নি।”

৮৭