পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
পাখীর কথা

সমস্ত তরুকোটরে বিচিত্র কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে। কেমন করিয়া কখন এই তরুকোটর দেখা দিল, তাহার কোনও ইতিহাস সেই সাহিত্যের মধ্যে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। সে যাহা হউক, প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়ি ফাঁপা হইয়া গেলে, গাছটাই অসার হইয়া পড়িল; তাহার বার্ত্তাশাস্ত্রের ভাষায় বলিতে গেলে economic utility অনেক কমিয়া গেল। প্রকৃতির বিচিত্র বিধানে কীটভুক্‌ কাঠঠোক্‌রা পাখী গাছের গুঁড়ি হইতে চঞ্চুপুট সাহায্যে দুষ্ট কীটগুলিকে নষ্ট করিয়া দিয়া গাছটিকে রক্ষা করে। যে পেচককে লোকে সাধারণতঃ এত ঘৃণা করে, সেই নিশাচর পাখীটি মূষিকাদির প্রাণসংহার করিয়া দেশের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে। কৃষিবিভাগে এবং জঙ্গলবিভাগে এই মূষিকের উৎপাত এত বেশী যে, সংস্কৃতশাস্ত্রে ইহাকে ছয়টা প্রধান উৎপাতের মধ্যে অন্যতম বলিয়া পরিগণিত করা হইয়াছে,—

অতিবৃষ্টিরনাবৃষ্টিঃ মূষিকাঃ শলভাঃ শুকাঃ।
অত্যাসন্নাশ্চ রাজানঃ ষড়েতা ঈতয়ঃ স্মৃতাঃ॥

 এই মূষিকধ্বংসকারী পেচক অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে থাকিয়া মানুষের অজ্ঞাতসারে মানবসমাজের উপকার সাধন করে বটে, কিন্তু আমরা মূঢ়তাবশতঃ আমাদের উপকারী বন্ধুগুলিকেই অনেক সময়ে বিনষ্ট করিয়া ফেলি। আর যে শুক পাখীকে আমাদের দেশে একটা ভয়ঙ্কর ঈতি বলিয়া বিশেষিত করা হইয়াছে, যাহাকে বিদেশীয় পক্ষিতত্ত্ববিদ্‌গণ ‘the greatest bird-pest we have in India’ বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকেন, সে আমাদের অত্যন্ত প্রিয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। সকল প্রকার শস্য ও ফলমূল নষ্ট করিতে শুকের সমকক্ষ কেহ নাই। অথচ সেই শুক আমাদের গানে ও গল্পে, ঘরে ও বাহিরে, সমাজের সহিত প্রীতিবন্ধনে গ্রথিত হইয়া আছে।