পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৫৫

নিকটে অন্য পোষাপাখী অপেক্ষা অধিক আদর পায়। সালিক পাখীকে এখনকার বৈজ্ঞানিকগণ Sturnidae পরিবারভুক্ত করিয়া পার্ব্বত্য ময়না হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্‌ জাতীয় মনে করেন। ইহারাও কিছু কিছু মানুষের বুলি বলিতে শিখে[১] এবং সাধারণ গৃহস্থের বাড়ীতে পালিত হইয়া থাকে। আমাদের মনে হয় যে, গৃহস্থপালিত এই দুই পাখীই সংস্কৃত সাহিত্যে সারিকা নামে পরিচিত[২]। এতদিন পর্য্যন্ত সালিক এবং পার্ব্বত্য ময়না উভয়েই বিহঙ্গতত্ত্ববিদের নিকটে একই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলিয়া গণ্য হইতেছিল। সাধারণ লোকের নিকটে ও ভারতবর্ষের অধিকাংশস্থলে উহারা উভয়েই ময়না নামে চলিয়া আসিতেছে।

 একটা কথা বোধ হয় এখানে বলা আবশ্যক যে, তৈত্তিরীয় সংহিতার শারি শ্যেতা ও উপরে উদ্ধৃত মহাভারত এবং ভাগবতের সারিকা আভিধানিক হিসাবে একই পক্ষীকে বুঝায়। সারি শব্দের বানানে “স” কিম্বা “শ” দুইই ব্যবহৃত হয়। আর একটি প্রশ্ন এই, তৈত্তিরীয় সংহিতায় যে শ্যেতা শারির উল্লেখ আছে, তাহা বৈজ্ঞানিক হিসাবে যথার্থ কি না? অর্থাৎ সারিকার বর্ণ শুভ্র হয় কি না? আমরা কিন্তু সাধারণতঃ সারিকার অঙ্গে কৃষ্ণধূসর বর্ণের

  1. “Like the European starling, it (the House-Mynah of India—Acridotheres tristis) will learn to talk, but the true talking mynahs (Eulabes) are very different birds.”—Frank Finn, The World’s Birds, p. 114.
  2. মিঃ উইলসন্ মেঘদূতের টীকায় সালিক পাখীকে Gracula religiosa বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। এই Gracula শব্দটি এখনকার Grackle শব্দের রূপান্তর মাত্র। মনিয়ার উইলিয়ামস্ কিন্তু সারিকার্থে ময়না ও সালিক (Gracula religiosa ও Turdus Salica) এই দুইটার মধ্যে যেটা হউক একটাকে নির্দ্দেশ করিয়াছেন। পার্ব্বত্য ময়না বুঝাইতে ওট্‌স্ প্রমুখ বৈজ্ঞানিকগণ Gracula religiosaর পরিবর্ত্তে Eulabes religiosa শব্দের ব্যবহার প্রশস্ত মনে করেন এবং সালিক পক্ষী বুঝাইতে তাঁহারা Turdus Salicaর পরিবর্ত্তে Acridotheres tristis শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ করেন। Acridotheres শ্রেণীর পক্ষিগণ Sturnidae পরিবারভুক্ত। এখনকার বৈজ্ঞানিকগণ Thrush জাতীয় পক্ষী বুঝাইতে Turdus শব্দের প্রয়োগ করিয়া থাকেন।