থাকিয়া যায়। মেঘদূতে কবি ক্রৌঞ্চরন্ধ্রের মধ্য দিয়া প্রব্রজনশীল এইরূপ হংসের ছবি আমাদের সম্মুখে উপস্থাপিত করিয়াছিলেন। ঋতুসংহারে কিন্তু মহাকবি নানা ঋতুতে বিভিন্ন-জাতীয় হংসকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে দেখিবার সুযোেগ আমাদিগকে দিয়াছেন। প্রচণ্ড গ্রীষ্মে যে হংসগুলি সহজে আমাদের নয়নগোচর হয় না; কোথায় তাহারা বিক্ষিপ্তভাবে ইতস্ততঃ বিচরণ করিতেছে, তাহার সন্ধান লইবার চেষ্টা পর্য্যন্তও গতিবিধি আমাদের প্রায় থাকে না; কবি তাহাদিগকে মুখ্যভাবে আমাদের সম্মুখে না আনিয়া কেবলমাত্র কামিনীর নূপুরধ্বনির আভাসের মধ্য দিয়া তাহাদের অস্তিত্ব স্মরণ করাইতেছেন। অতএব গ্রীষ্মবর্ণনায় হংসকে আমরা সম্মুখে পাইলাম না। গ্রীষ্ম ঋতুর অবসানে বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে ইহারা কেমন করিয়া ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া যায়, তাহা আমরা মেঘদূত-প্রসঙ্গে আলোচনা করিয়াছি; এস্থলে তাহার পুনরুল্লেখ নিয়োজন। সুতরাং বর্ষাবর্ণনায় কবি তাহাদিগকে একেবারে বাদ দিয়াছেন;—ইহার মধ্যে আমরা হংসের অস্তিত্বের আভাসমাত্রও পাই না। বর্ষাপগমে ইহারা যখন ভারতবর্ষে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া এদেশের নদ-নদী-হ্রদ-তড়াগসমূহ পুনরায় অধিকার করিয়া বসে,—শ্বেতা শরৎলক্ষ্মীর সেই দৃশ্যটুকুই বারম্বার আমরা ঋতুসংহারের শরৎবর্ণনায় দেখিতে পাই। তখন ইহাদের কলগীতি শরৎ-শ্রীর নূপুরশিঞ্জিত বলিয়া ভ্রম হয়। ইহাদের শুভ্র পতত্রে নদীর জল সাদা হইয়া উঠে। বিচিত্রলীলাভঙ্গে চঞ্চুপুট সাহায্যে ইহারা তটিনীর ক্ষুদ্র বীচিমালাকে সংক্ষোভিত করিয়া তুলে। কাদম্বসারসের কলধ্বনি তটিনীর তীরদেশকে আকুলিত করে। সরোবরে হংসমিথুনের উন্মত্ত ক্রীড়া ও উদ্দাম চাপল্য পথিকের চিত্তহরণ করে। সীমান্তর ঘন ঘন হংসনাদে প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠে। কুমুদশোভিত জলাশয়ে রাজহংস প্রকৃতির
পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
পাখীর কথা